সামিয়া রহমান ও সৈয়দ মাহফুজুল হকের প্রবন্ধটি আমরা ছাপছি বাংলাদেশের রাজনীতির দ্বীমেরুকৃত অবস্থাকে মাথায় রেখে। ২০১৩ সালের ৫ই মে ঘটে যাওয়া হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনের পর বাংলাদেশের সমাজের বিভক্তি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এটাকে আপাত দৃষ্টিতে একই বছরের ৫ ই ফেব্রুয়ারি শাহবাগ আন্দোলনের বিরুদ্ধ আন্দোলন বলেই ধরা হয়। যুদ্ধাপরাধী বিরোধী সেই আন্দোলন শুরুতে দলমত নির্বিশেষে একটা সার্বজনীন লক্ষ্য নিয়ে পরিচালিত আন্দোলন হিসেবে পরিচিতি পেলেও, পরের দিকে এই আন্দোলনকে দলীয়করণ করা হয়েছে বলেই অনেকে মনে করেন এবং তা এখন দৃশ্যমান। আবার সেই আন্দোলনকে ঘিরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির অপপ্রচারের ফলে এটিকে নাস্তিকদের আন্দোলন বলে চালিয়ে দেওয়ার একটি প্রচেষ্টা লক্ষ করা গিয়েছিল। যার ফলশ্রুতিতে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বিভ্রান্ত। হেফাজতে ইসলাম মতিঝিলের শাপলা চত্বরে জড়ো হয়ে তাদের তেরো দফা দাবি উপস্থাপন করে। এই অপপ্রচার বা প্রপাগাণ্ডার মূলে ভূমিকা রেখেছিল গুটি কয়েক মিডিয়া, যার মধ্যে দৈনিক আমার দেশ অন্যতম। এই লেখায় যুক্তরাষ্ট্রের উদাহরণ দিয়ে দেখানো হয়েছে কিভাবে মিডিয়া রাজনৈতিক স্বার্থে কিছু ঘটনার পক্ষে আবার কিছু ঘটনার বিপক্ষে অপপ্রচার চালিয়েছিল।
উপনিবেশবাদের করাল গ্রাস থেকে মুক্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার উপর উপনিবেশবাদের ছোবল এখনও বিদ্যমান। সেই উপনিবেশবাদের শুরুটা কিভাবে হল সেই ইতিহাস জানা অত্যন্ত জরুরি। তাছাড়া সাম্প্রতিককালে এ নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে নতুনভাবে বিতর্ক হচ্ছে। জ্ঞানালোচনার এ প্রসঙ্গটি অর্থাত্ ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের শুরু হয় নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের মধ্য দিয়ে। কিন্তু যে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে নবাবকে ক্ষমতাচ্যুত করে পরবর্তীতে ইংরেজরা ক্ষমতা দখল করে সেই ষড়যন্ত্রে ইংরেজদের ভূমিকা এবং তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে একটি আলোচনা থাকছে মোফাখ্খারুল ইসলামের লেখায়। এই প্রবন্ধের অন্যমত গুরুত্ববহ বিষয় হল ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবে বাংলা অঞ্চলের সম্পদ কতটুকু কাজে লেগেছিল এবং কি পরিমাণ সম্পদ পাচার করা হয়েছিল তা নিয়ে বিতর্ক।
মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত বেশ কয়েকটি কারণে আমাদের কাছে এবং বিশ্ব রাজনীতিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভূ-রাজনৈতিকভাবে এই সীমান্ত বেশ তাত্পর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এশিয়ান হাইওয়ে ও প্রাকৃতিক গ্যাসের মত বিষয়গুলো বর্হিবিশ্বের কাছে এই সীমান্তের গুরুত্ব বাড়ালেও, বাংলাদেশের সমাজ বাস্তবতায় এর পাশাপাশি রোহিঙ্গা বিষয়টিও অনেক স্পর্শকাতর। ভিলেম ভ্যান শেন্ডেল বাংলাদেশের উপর আগ্রহী একজন গবেষক ও লেখক। মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তের গুরুত্ব অনুধাবন করেই শেন্ডেলের এই লেখাটি প্রকাশে উত্সাহী হলাম।
এই সংখ্যায় মোখলেসুর রহমান (সিধু ভাই ) এর দীর্ঘ সাক্ষাত্কারটি ছাপানো হলো। সাক্ষাত্কারটি জাতীয় জাদুঘর এর কথ্য ইতিহাস প্রকল্পের আওতায় গৃহীত আমাদের দুই জাতীয় অধ্যাপক সরদার ফজলুল করিম ও মুস্তফা নুরউল ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। সম্প্রতিকালে সরদার ফজলুল করিম মারা গেছেন। তাঁর প্রতি সম্মান জানিয়ে তাঁর গৃহীত এই সাক্ষাত্কারটির ঐতিহাসিক গুরুত্বের কথা বিবেচনায় নিয়ে আমরা অনুস্মৃতি পর্বে এ সাক্ষাত্কার ছাপানোর সিদ্ধান্ত নেই। এই সাক্ষাত্কারে দীর্ঘ সময়ের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সমাজ অর্থনীতি এবং বিশেষত রাজনৈতিক অন্তরমহলের নানা অপ্রকাশিত কথা পাওয়া যাবে। পাওয়া যাবে আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসের মূল মূল ব্যক্তিদের সম্পর্কে তাঁর মূল্যায়ন ও ব্যক্তি সম্পর্কের নানা বিবরণী। এ সাক্ষাত্কারে পাঠকরা ইতিহাসের নতুনমাত্রা ও উপাদান খুঁজে পাবেন।
নব্বই ও পরবর্তী দশকের বহুল আলোচিত রাজনৈতিক প্রসঙ্গ ও বিষয়াদি নিয়ে তত্কালীন সময়ের লেখা মতিউর রহমানের মন্তব্য কলাম ও উপসম্পাদকীয় কলাম নিয়ে প্রথমা প্রকাশনী কর্তৃক প্রকাশিত গ্রন্থ মুক্ত গণতন্ত্র রুদ্ধ রাজনীতি গ্রন্থটিকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় নিয়েছি। ব্যক্তি মতিউর রহমান দেশের বহুল প্রচারিত দৈনিক পত্রিকা প্রথম আলোর সম্পাদক। তাঁর লেখার মাধ্যমে তত্কালীন সময়টি যেমন তুলে ধরেছেন, তুলে ধরেছেন তাঁর নিজস্ব ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ। বই আলোচনায় হাসান শফি আমাদের সমসাময়িককালের দলিল হিসেবে যার একটি নিরপেক্ষ আলোচনার প্রচেষ্টা নিয়েছেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক গবেষণায়, গবেষকদের জন্য দরকারি গ্রন্থ হিসেবে বইটি বিবেচিত হবে।
আজিজুল রাসেল শ্রীনাথ রাঘবনের ১৯৭১: আ গ্লোবাল হিস্ট্রি অব দ্য ক্রিয়েশন অব বাংলাদেশ গ্রন্থটি আলোচনা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পেশাদার ইতিহাসবিদদের লেখা খুবই অল্প। সে বিচারে এ গ্রন্থটি ইতিহাসসম্মত গবেষণা পদ্ধতি অনুসরণ করে লেখা একটি পান্ডিত্যপূর্ণ গ্রন্থ। তবে শেষ অর্থে এ গ্রন্থে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে অনেক সংকীর্ণভাবে দেখা হয়েছে এবং এ অঞ্চলের মানুষের মুক্তির আকাঙ্খাকে খাটো করে দেখা হয়েছে এবং বিশেষভাবে মধ্যবিত্ত শিক্ষিত শ্রেণীর ভূমিকাকে বড় করে দেখা হয়েছে। তত্সত্ত্বেও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনায় গ্রন্থটি একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন।