লিসবনে শহীদ মিনার: পর্তুগালপ্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে স্মৃতি ও সম্প্রদায়ের রাজনীতি এবং দীর্ঘ দূরত্বের জাতীয়তাবাদ

সারসংক্ষেপ

বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশি বহুজাতিক জনপরিমণ্ডল ক্রমান্বয়ে গুরুত্বসহকারে বেড়েছে। এ প্রবন্ধে মূলত বহুজাতিক রাজনৈতিক কার্যক্রমকে ফোকাস করা হয়েছে। এখানে মুখত যুক্তরাজ্যে ব্রিটিশ বাংলাদেশি ও বাংলাদেশি অভিবাসীদের একাত্মতার উপায় বর্ণনা করা হয়েছে। যদিও অন্যান্য অঞ্চলে এ জনপরিমণ্ডল থেকে অংশগ্রহণকারীদের ভূমিকা সরিয়ে রাখা হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় রেখে এ প্রবন্ধে, ২০১১ সালের লিসবন স্কয়ারে শহীদ দিবস উদ্যাপনের বিশ্লেষণের ওপর নির্ভর করে বাংলাদেশ ও পর্তুগালের মধ্যে বহুজাতিক রাজনৈতিক দিক তুলে ধরা হয়েছে। প্রথমত, এ বাংলাদেশি জনপরিমণ্ডল যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশিদের বাংলাদেশ ও অন্যান্য এলাকা যেমন পর্তুগালে প্রতীক, দীর্ঘ দূরত্বের জাতীয়তাবাদ এবং রাজনীতির স্মৃতির মাধ্যমে যুক্ত করে। দ্বিতীয়ত, এ লেখাতে বলা হয়েছে যেখানে বাংলাদেশিদের বসবাস এবং এর নতুন অর্থ অনুমিত হয় সে অনুযায়ী ব্যাখ্যা করা হয়।

শব্দগুচ্ছ: বহুজাতিক জনসাধারণের এলাকা, শহীদ দিবস, রাজনীতির স্মৃতি, লুসো-বাংলাদেশি।

প্রারম্ভিক আলোচনা

১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর, শহীদ দিবস, বাংলা ভাষা দিবস ইউনেসকো কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। পর্তুগালের১ কেন্দ্রীয় লিসবনে মার্টিম মনিজ স্কয়ারে ২০১১ সালের একুশ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত/পালিত হয়। অনুষ্ঠিত দিবসটি একটি ঘরোয়া বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশন ‘বন্ধুদের বন্ধু’ দ্বারা সংগঠিত হয়। এটি সংগঠনে লিসবন সিটি হল ও রেনোভার আ মৌরারিয়া (একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, যা এ এলাকার পুনঃসংস্কার করে) সহায়তা দিয়েছে। শহীদ মিনারের রেপ্লিকা, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অবস্থিত, সেখানে ১৯৫২ সালে পাকিস্তানি বাহিনী দ্বারা পূর্ব পাকিস্তানে উর্দু মাতৃভাষা হওয়ার বিরুদ্ধে আন্দোলনে বাঙালি ছাত্রদের হত্যা করার সূত্রপাত হয়েছিল। তা মার্টিম মুনিজ স্কয়ারের দক্ষিণ পাশে সাময়িকভাবে তৈরি করা হয়েছে। এই স্কয়ারটি মৌরারিয়ায় অবস্থিত, যা গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক উপদেশ দ্বারা ‘অভিবাসী প্রতিবেশী’ হিসেবে বর্ণিত। মার্টিম মুনিজ স্কয়ার নামটি ১২ শতাব্দীতে পর্তুগালের ভিত্তিপ্রস্তর এবং মুরদের থেকে লিসবন জয় করার শিল্পানুগ হিসেবে পরিচিত। এই এলাকা লাল ও সবুজ কার্পেট দিয়ে সাজানো হয়েছে, যা বাংলাদেশের পতাকার রং এবং একটি বড় পোস্টার বাংলা ও পর্তুগিজ ভাষায় ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস: ২১ ফেব্রুয়ারি’। প্যানেলের সাজে বাংলাদেশি ও পর্তুগিজ পতাকা এবং ঢাকায় সজ্জিত শহীদ মিনারের ছবি প্রাধান্য পেয়েছে। পর্তুগিজ ও বাংলাদেশি জাতীয় পতাকা স্কয়ারের দক্ষিণ দিকে পাশাপাশি উড়ছিল।

একটি ছোট একুশে২ বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে বাংলা উপন্যাস, ছোটদের বই, শিক্ষাসংক্রান্ত দলিল এবং ডিভিডি বিক্রি হয়েছে। ১৪ এপ্রিলের বাংলা নববর্ষ পয়লা বৈশাখের উদ্যাপন উপলক্ষে অনুষ্ঠানও ঘোষণা করা হয়েছিল, যা আলগ্রেভ পর্যন্ত দিবাভ্রমণ ছিল। সারা দিন ধরে পর্তুগালে বাংলাদেশি তিনটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ পর্তুগাল, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী পার্টি পর্তুগাল এবং ইসলামিক ফোরাম শহীদ মিনারের রেপ্লিকায় ফুল দিয়ে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।

অনেক ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছিল, তবলা ও হারমোনিয়ামের সাহায্যে জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়েছিল। দর্শকদের মধ্যে শুধু বাংলাদেশি নারী, পুরুষ, শিশু ছিল না; লিসবন সিটি কাউন্সিলের প্রতিনিধিও ছিলেন। এই এলাকার অভিবাসী ও অনভিবাসী জনগণের মধ্যে বেশির ভাগ দর্শকই বাংলাদেশি ছিল।

সন্ধ্যার পর শহীদ মিনারের রেপ্লিকা সরানো হয় এবং উদ্যাপনের ভেন্যু পর্তুগিজ ধর্মীয় অ্যাসোসিয়েশনের কাছে নেওয়া হয়, যা সংগীতানুষ্ঠান ও কবিতা আবৃত্তিতে ভরপুর ছিল।৩ ওই দিন শেষে অনুষ্ঠানের ছবি ফেসবুকে দেওয়া হয় এবং ব্যাপকভাবে মন্তব্য করা হয়। একুশে ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো পর্তুগালে উদ্যাপন করা হয় এবং প্রথমবারের মতো বাংলাদেশি সাংস্কৃতিক প্রতিভা প্রকাশ্যে দৃশ্যমান হয়।৪

ক্লেয়ার অ্যালেক্সান্ডার (২০১৩: ৫৯১) বলেন: শহীদ মিনার স্তম্ভ এবং একে ঘিরে বার্ষিক একুশে আচার-অনুষ্ঠান, যা পূর্ব লন্ডনে বাংলাদেশি কমিউনিটির রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক পরিচয়/জাতীয়তার প্রাথমিক দিক।

এই লেখাটি শহীদ মিনারের গুরুত্ব এবং একুশের আচার-অনুষ্ঠানের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে, যা বাংলাদেশি বহুজাতিক জনগণের স্থান বলা যায়।৫ গত কয়েক বছরে বাংলাদেশি বহুজাতিক জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে লেখা গুরুত্বসহকারে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং প্রধানত বাংলাদেশি অভিবাসীদের এবং তাদের বংশধরদের যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক কার্যক্রমের ওপর নজর দেয়। (ইয়েড ১৯৮৯, ইয়েড ও গার্বিন ২০০৬, গ্লিন ২০০৬, অ্যালেক্সান্ডার ২০১৩, কিবরিয়া ২০১১ ইন্টার এলাইয়া)। বাংলাদেশিদের জন্য যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র হলো সবচেয়ে বেশি জরুরি দীর্ঘমেয়াদি অভিবাসন গন্তব্য। (ভিসরাম ১৯৮৬, গার্ডেনার ১৯৯৪, কিবরিয়া ২০১১ দেখুন) এবং এসব দেশে তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম ক্রমাগত বাড়ছে এবং গবেষণা হচ্ছে।

গবেষণাকৃত থিমগুলো ভিন্ন এবং মূলধারার ব্রিটিশ রাজনৈতিক দল (ইয়েড ১৯৮৯) ও স্থানীয় রাজনীতিতে বাংলাদেশি সেক্যুলার ও ইসলামি অংশের মধ্যে সংগ্রাম, সমসাময়িক বহুজাতিক রাজনৈতিক কার্যক্রম, বাঙালি সংস্কৃতির প্রতীকের প্রাধান্য, যেমন: বৈশাখী মেলা, লন্ডনে ব্রিটিশ-বাংলাদেশিদের (ইয়েড ও গার্বিন ২০০৬) জন্য শহুরে ও রাজনৈতিক স্থান তৈরি করা, যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশিদের ভূমিকা এবং ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও শেখ মুজিবুর রহমানের সহায়তা (লিন ২০০৬) এবং বাংলাদেশি স্বাধীনতা যুদ্ধ, বাঙালি পরিচয় ও যুক্তরাজ্যে সমসাময়িক জাতিগত রাজনীতির মধ্যে সম্পর্ক (অ্যালেক্সান্ডার ২০১৩)। এই বিশেষ ইস্যুতে বেঞ্জামিন জেটলিন আন্তর্জাতিক অপরাধী ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিতর্ক উত্থাপন করেন কীভাবে ব্রিটিশ বাংলাদেশিরা এই সাম্প্রতিক বিতর্কে জড়িত হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর কিছু নেতা যারা ১৯৭১ সালে যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিল তাদের সহায়তা করে; যেখানে অন্যরা নিরপেক্ষদের সহায়তা করে, যারা শাহবাগ আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত। এসব অ্যাপ্রোচের দ্বারা বহুজাতিক রাজনীতির গুরুত্ব বোঝা যাচ্ছে।

বাংলাদেশি অভিবাসনের বিভিন্নতার কারণে জনগণের প্রভাব (আপ্পাদুরাই ১৯৯৬) অন্যান্য জায়গা, মানুষ ইত্যাদি যা দৃশ্যপট থেকে দূরে সরে গেছে তার বিস্তৃতি ঘটছে, দক্ষিণ ইউরোপে ইতালি, পর্তুগাল, স্পেন এবং গ্রিস অভিবাসন আশির দশকের শেষে শুরু হয়েছে এবং আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পেয়েছে যেমন শ্রমিক অভিবাসন ও পরিবারের পুনর্মিলন হয়েছে গত দশকে (নাইটস ১৯৯৬, জেটলিন ২০০৬, ম্যাপ্রিল ২০১১, ২০১৪)। অনেক প্রবাসী লিসবন, মাদ্রিদ ও রোমে স্থায়ী হয়েছেন, সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করেছেন, তাঁদের সন্তানদের শিক্ষা, ব্যবসা ও অন্যান্য জায়গা যেমন ধর্মীয় স্থান মসজিদ ও প্রার্থনার জায়গায় বিনিয়োগ করেছেন। পর্তুগালে স্থায়ী বসতি সত্ত্বেও বহুজাতিক অনুশীলন ও সচেতনতা বৃদ্ধি ও অভিবাসন (স্কিলার ২০০৪) ব্যবস্থা বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশ যেখানে আত্মীয়তা ও বন্ধুত্বের বন্ধন রয়েছে তা চলছে।৬ বহুজাতিক কাজের কিছু উদাহরণ গৃহস্থালি পর্যায়ে দেখা যায় যেমন: গৃহস্থালির সম্পদ ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণ, গৃহস্থালি আচার-অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা, ভূমি কেনা ও বিনিয়োগ, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক রেমিট্যান্স, বয়োজ্যেষ্ঠ ও শিশুদের দেখাশোনা করা (এই শেষের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে এটা বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে দেখা যায়, যখন শিশুরা তাদের দাদা-দাদির সঙ্গে সময় কাটায়)। এই দিক থেকে, বেশির ভাগ বাংলাদেশি যারা পর্তুগালে থাকে তারা বহুজাতিক অভ্যন্তরীণ ইউনিটের অংশ, যা দক্ষিণ ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের এবং ইউরোপের অন্যান্য স্থানে অথবা অন্য জায়গার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে।

অন্য দুটি দিক হলো প্রতিনিধিত্বমূলক রাজনীতিতে অংশগ্রহণ (হল ১৯৯৭) এবং স্বদেশ রাজনীতিতে অংশ (ভারটোভেক ২০০৯)। প্রথমটি অংশগ্রহণের জন্য প্রতিনিধিত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি এবং গ্রহীতা সমাজের জনসমক্ষে দাবি করা, অপর পক্ষে, স্বদেশি রাজনীতি লবি, ঘরোয়া রাজনীতি, ক্যাম্পেইন ও অন্যান্য দীর্ঘ দূরত্ব জাতীয়তাবাদের মাধ্যমে বাংলাদেশি রাজনীতিতে অংশ নেয় (এন্ডারসন ১৯১৮, স্কিলার ও ফোরন ২০০১)।৭

শহীদ দিবস উদ্যাপন প্রাথমিক চিত্র বর্ণনা করে। এই লেখাটির উদ্দেশ্য বহুজাতিক সামাজিক ক্ষেত্রে (স্কিলার বঃ ধষ. ১৯৯২)৮ সম্প্রতি বাংলাদেশ ও পর্তুগালের মধ্যে রাজনৈতিক দিকের নৃতাত্ত্বিক দিক তুলে ধরা। এই দিকগুলো শুধু স্বদেশি রাজনীতি তৈরি করে না, পর্তুগিজদের মধ্যে বাংলাদেশি সম্প্রদায়ও তৈরি করে। এই লেখার যুক্তি, প্রথমত, এই বাংলাদেশি বহুজাতিক প্রভাব যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশিদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে, বাংলাদেশ এবং অন্যান্য স্থানে প্রতীকের দ্বারা দীর্ঘ দূরত্বের জাতীয়তাবাদ এবং বিশেষভাবে রাজনীতির স্মৃতির মাধ্যমে, আয়ান হেকিংস (১৯৯৫) বলেন, রাজনীতির স্মৃতি সাম্প্রদায়িকতার মাধ্যমে স্পষ্ট যেমন প্রতিষ্ঠার ঘটনা উদ্যাপন সঙ্গে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট, যা পৃথকভাবে অতীতকে বর্ণনা করে।৯

দ্বিতীয়ত, এই লেখায় দেখা যায় যে এই উপদেশ ও প্রকল্পগুলো অনূদিত হয় এবং এভাবে প্রেক্ষিত অনুযায়ী রূপান্তরিত হয়, যার ওপর বাংলাদেশিরা বাস করে। এই ক্ষেত্রে নাগরিকত্ব শাসন ও পর্তুগিজ অভিবাসন রাজনীতির মাধ্যমে তারা ‘সম্প্রদায়’ তৈরি করতে অভ্যস্ত।১০ এ সত্ত্বেও এসব অপ্রাসঙ্গিক গঠনের একই দৃশ্যমানতা ও প্রভাব নেই, উদাহরণস্বরূপ, বাউম্যান (১৯৯৬) তাঁর সাউথ হল গবেষণায় বলেছেন, সম্প্রদায় সম্পর্কে উপদেশ ও সংকেতের গঠন রাষ্ট্রের অ্যাক্টররা নিজেরা তৈরি করে (অথবা এনজিওগুলো একই ভূমিকা পালন করে) নাগরিক নীতির ক্ষেত্রে এবং মানুষের আচার-আচরণের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এসব শক্তিশালী উপদেশ সমাজের উত্পাদন সেক্টরে পরোক্ষভাবে প্রকাশ করে অভিবাসীদের মধ্যে একই ধরনের সম্প্রদায় ও সংস্কৃতি হিসেবে কোনো লৌকিক সংস্করণ জটিলতা ছাড়া (দৈনন্দিন প্রেক্ষাপটে অপ্রাসঙ্গিক গঠন, বাউনেন ১৯৯৬ দেখুন)। সুতরাং সম্প্রদায় একটি ব্যাখ্যামূলক বিশ্লেষণাত্মক হাতিয়ার নয় বরং একটি রাজনৈতিক প্রকল্প।

প্রিটিশ কেসে অ্যালেক্সান্ডার (২০১৩) ও ইয়েড ও গার্বিন (২০০৬) দ্বারা বর্ণিত যুক্তি ও লিসবনের বিতর্কে সাধারণ উপাদানে ও যুক্তি যদি সত্য হয় এটাও স্বীকৃতি দেওয়া দরকার যে পর্তুগিজ কেস বাংলাদেশি সাংস্কৃতিক পরিচয়, যা অভিবাসীদের পর্তুগালে রাজনীতির নতুন ব্যাখ্যা দেয়।

বর্ধিত ক্ষেত্র পদ্ধতি দ্বারা (গ্লাকম্যান ১৯৪০) অনুপ্রাণিত হয়ে, যা পরিস্থিতিগত বিশ্লেষণ১১ নামেও পরিচিত, এই যুক্তি একটি ঘটনার বিশ্লেষণ ও গতিশীলতা দ্বারা কীভাবে বহুজাতিক সামাজিক প্রক্রিয়া প্রকাশিত হয়। এটা করতে গিয়ে আমি প্রথমে বাংলাদেশ ও পর্তুগালের কিছু অভিবাসন ইতিহাস দেখাব। দ্বিতীয়ত, কীভাবে পর্তুগালের তিনটি দীর্ঘ দূরত্ব জাতীয়তাবাদ এবং অতীতের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের প্রতিদ্বন্দ্বী তা উপরে উল্লেখিত উদ্যাপনের মাধ্যমে প্রকাশ করে তা দেখাব। তৃতীয়ত, এই একই ঘটনা কীভাবে একটি পরিষ্কার অনুস্মরক (Reminder) হিসেবে কাজ করে, যেখানে পর্তুগালের রাজনীতিতে বাংলাদেশের ‘সম্প্রদায়’ হিসেবে অংশগ্রহণ আশা করা হয়। পরিশেষে আমি কিছু উপসংহার টানব।

আধুনিকত্ব, বিতাড়ন ও বহুজাতিক জাতীয়তাবাদ: পর্তুগালে বাংলাদেশিরা

বাংলাদেশ ও পর্তুগালের মধ্যে অভিবাসানের ইতিহাস আশির দশক থেকে। অপর্টোতে বাংলাদেশ কাউন্সেলর অফিসের রেজিস্ট্রেশন অনুযায়ী আজ দেশে ৪৫০০ বাংলাদেশি বাস করে।

এসব বাংলাদেশির অধিকাংশই অন্তর্বর্তী সামাজিক গোষ্ঠী থেকে এসেছে, যারা বাংলাদেশে ‘নতুন’ ও ‘উচ্চ মধ্যবিত্ত’ শ্রেণির হিসেবে চিহ্নিত শহুরে এবং উচ্চ পর্যায়ের শিক্ষা রয়েছে (ম্যাপ্রিল ২০১৩, ২০১৪; স্পেন ও ইতালির সঙ্গে একটি বিশ্লেষণ; জেটলিন ২০০৬ এবং নাইটস ১৯৯৬ দেখুন)। এসব সামাজিক স্তরের জন্য সাধারণত বিদেশ এবং ইউরোপে আধুনিক জীবনমান থাকে শিক্ষার মূলধন ও সাবালকত্ব (ম্যাপ্রিল ২০১৪) এবং ভবিষ্যতের অনিশ্চিত পথকে এড়ানো যায় (বাল ২০১২)১৩

বিদেশ যাওয়ার জন্য আমার মধ্যস্থতাকারী বিভিন্ন রুট অনুসরণ করে। কেউ সরাসরি বাংলাদেশ থেকে মহাদেশীয় ইউরোপে দেশান্তর করে, যেখানে অন্যরা ধাপে ধাপে করে। যারা ধাপে ধাপে যায় তারা প্রথমে মিনা (মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা) দেশগুলোতে যায় এবং কখনো ইউরোপে পুনরায় দেশান্তরিত হয়। একসময় ইউরোপে তারা বিভিন্ন দেশে আত্মীয় ও বন্ধুদের অনুসরণ করে চাকরি ও স্থায়ী হওয়ার সুযোগ খুঁজতে যায়। এভাবে আমার বেশির ভাগ গবেষণা সহকারী ইউরোপ মহাদেশে রয়েছে যেমন: অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স এবং ২০০০ ও ১৯৯০-এর দিকে নিয়মিতকরণ প্রক্রিয়ার সময় পর্তুগালে পৌঁছায়।১৪

দক্ষিণ ইউরোপের দেশগুলোতে একত্রীকরণের সময় অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তন শুধু জীবনমান উন্নত করেনি, আন্তর্জাতিক শ্রমিক বিভাগ ও বিশ্ব অভিবাসনের ক্ষেত্রেও তাদের অবস্থার উন্নতি হয়েছে (কিং ও অন্যান্য ২০০০)। ১৯৬০-এর শুরুর দিকে গ্রিস, ইতালি, স্পেন ও পর্তুগাল উচ্চ অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হারের অভিজ্ঞতা অর্জন করে। একসঙ্গে উত্পাদন মানের পরিবর্তন আধুনিকীকরণের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগ, সম্প্রসারিত সেবা খাত ও মূলধনের গতিশীলতা বোঝায় যে এসব দেশ আন্তর্জাতিক অভিবাসনের সঙ্গে তাদের পরিবর্তিত অবস্থান প্রত্যক্ষ করেছে (কিং ও অন্যান্য ২০০০)।

এসব গঠনমূলক পরিবর্তনে ইউরোপে অভিবাসন ধীরস্থির হয়ে পড়েছে এবং ক্ষণস্থায়ীভাবে পর্তুগিজ ঔপনিবেশিক স্থানে এবং যার সঙ্গে পর্তুগালের ঐতিহাসিক কোনো সম্পর্ক নেই, সেখানে অভিবাসীদের আগমন বৃদ্ধি পেয়েছে। অভিবাসনপ্রবাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে অন্যান্য ভূমধ্যসাগরীয় দেশের মতো পর্তুগাল ১৯৯০ ও ২০০০-এ আইন ও বিশেষ নিয়মিতকরণ প্রোগ্রাম উন্নয়ন করেছে।

অনেক বাংলাদেশির জন্য পর্তুগালে যাওয়ার সিদ্ধান্ত বিতাড়িত হওয়া থেকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নাগরিক অধিকারের খোঁজের মাধ্যমে অব্যাহতি হিসেবে কাজ করে। অ্যারেন্ডট (১৯৫১) একে ‘অধিকারের অধিকার’ বলেছেন। ডি জেনোভা (২০০২) এবং কালাভিটার (২০০৫) তত্ত্ব অনুযায়ী অনেক ইউরোপিয়ান দেশে অবৈধ তৃতীয় বিশ্বের নাগরিক তৈরি হচ্ছে যারা অর্থনৈতিক শোষণের শিকার। ইতালি ও স্পেনের মতো পর্তুগালে অভিবাসন যা ক্ষণস্থায়ী হলেও তা অধিকার আদায় ও বিতাড়ন থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে মনে হয় (নাইটস ১৯৯৬ ও জেটলিন ২০০৬)

বিতাড়ন একটি বড় রকমের ঝুঁকি মনে করা হয়, কারণ এখানে সম্পত্তি বিক্রয় ও টাকা ধারসংক্রান্ত পরিবারের বিনিয়োগ থাকে এসব অভিবাসন প্রকল্পে। ফলে বাংলাদেশে বিতাড়িত হওয়ার কারণে এসব বিনিয়োগের পরিপূরক ব্যর্থ হয়, শুধু তার কাছে না তার পরিবারের কাছেও (কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিদেশে ব্যর্থ হওয়া মানে সমাজে পরিবারের অসম্মান)।

নিয়মিতকরণের পর অনেকে পর্তুগালে স্থায়ী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিল এবং অর্থনীতির নিচু পদে যেমন: নির্মাণ, রাস্তার কাজ, পরিষ্কারকের কাজ করতে লাগল। শিগগিরই ব্যক্তিগত সঞ্চয় ও পরিবার-পরিজন থেকে গৃহীত ঋণ মার্টিম মুনিজ স্কয়ার ও মৌরারিয়ার কাছাকাছি যা সিটি সেন্টারের পরে ছোটখাটো বাণিজ্যিক কাজে বিনিয়োগ করে। এটি লিসবনের একটি এলাকা যেখানে চীন, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, কোপ ভার্দে, গুয়েনা বিসভি, মোজাম্বিক, সেনেগাল থেকে আসা নতুন লিসবনবাসীর খোঁজ পাওয়া যায়। এই উপস্থিতি যা সত্তরের দশকের শেষে শুরু হয়েছে তা শুধু বাণিজ্যিক নয় আবাসিকও এবং এটা সাবেক পর্তুগিজ উপনিবেশে উত্তর-উপনিবেশ অভিবাসী এবং বিশ্ব অভিবাসনপ্রবাহের সঙ্গে পর্তুগালের অবস্থানের পরিবর্তন সম্পর্কযুক্ত বিভিন্ন দেশ থেকে অভিবাসীদের উপস্থিতি মূলধারার গণমাধ্যম ও রাজনীতিকদের দ্বারা তৈরিকৃত উপদেশ যা আধুনিক পর্তুগাল, আন্তসংস্কৃতি, বিভিন্ন সংস্কৃতি, অভিবাসনের সঙ্গে লিসবনের এই এলাকায় সহযোগী হয়েছে। একই সময়ে বেসরকারি সংস্থা ও সিটি হল দ্বারা অসংখ্য উদ্যোগ নেওয়া হয়। যেমন ‘টোডোস’ অথবা ‘সিউশন’ মার্কেট করা হয়।

কেন্দ্রীয় লিসবনে আজ বাংলাদেশি দু শর বেশি ব্যবসা রয়েছে। যেমন মুদিদোকান, তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক দোকান, হস্তশিল্প, বাংলাদেশি ও ভারতীয় খাবারের দোকান, বাংলাদেশি মিষ্টির দোকান, ভ্রমণ সংস্থা, ইন্টারনেট ক্যাফে, ডোনার কাবাববিক্রেতা এবং পত্রিকার দোকান। একটি খুব বৈচিত্র্যময় বাজার, যা বাংলাদেশি ক্রেতাদের পান ভোজনসংক্রান্ত স্মৃতি পর্যন্ত যায়, যা দেশের সর্বত্র সস্তায় কাপড় বিক্রয় করে। (মানকেকার ২০০৫)।

প্রথমে এটি একক তরুণ প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের অভিবাসনপ্রবাহ ছিল, কিন্তু এখন অধিকাংশই বাংলাদেশে বিয়ে করেছে এবং তাদের স্ত্রী ও সন্তানেরা পর্তুগালে আছে। এটা বাংলাদেশ ও পর্তুগালের মধ্যে শুধু নতুন অভিবাসনপ্রবাহ তৈরি করে না, এটা জনসংখ্যার কিছু বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন ও তৈরি করে। শত বাংলাদেশি পরিবার লিসবনে এসে পুনরায় একত্র হয়, যার বেশির ভাগ ছোট পরিবার, যার সঙ্গে পরিবারের আরেক সদস্য থাকে সাধারণত স্বামী অথবা স্ত্রীর ভাই, সাধারণত যে ইউরোপে তাদের মাধ্যমে নতুন পরিবেশে আসে। আমার কিছু গবেষণা সহকারীর মতে, তুমি এমন কাউকে আনতে পারো না যে তার পুরো জীবন গ্রামে কাটিয়েছে এবং ইংরেজি বলতে পারে না। এই কমিউনিটির সদস্যরা তাদের সন্তানের সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা উভয় দিকেই বিনিয়োগ করে।

যারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করে তাদের পরিবারকে একত্র করে সন্তানদের শিক্ষা ও সঞ্চিত অর্থনৈতিক মূলধন বিনিয়োগ করে তাদের সফল প্রবাসী হিসেবে দেখা হয়, পর্তুগিজ শব্দে যাকে বলা হয় ' patrao ' মানে বস। পরিবার ও অর্থনীতি ছাড়াও তারা কিছু বাংলাদেশি এলাকায় রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করে, যেমন বাংলাদেশি মসজিদ ‘বায়তুল মোকাররম’ এবং লুসো-বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশন। বাংলাদেশি মসজিদ বাংলাদেশিদের দ্বারা অর্থায়ন হয়। তারা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগকারী এবং ‘ওয়াফ’ হিসেবে বিনিয়োগ করে।

অভিবাসনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্নতা। পর্তুগালে কমপক্ষে বাংলাদেশের ১২টি জেলার মানুষ পাওয়া যাবে যেমন: ঢাকা, ফরিদপুর, নোয়াখালী, সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, রংপুর, চাঁদপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, টাঙ্গাইল এবং গোপালগঞ্জ (স্পেন ও ইতালিতে বাংলাদেশিদের মত: নাইটস ১৯৯৬ ও জেটলিন ২০০৬ দেখুন)। ঢাকা খুব শক্ত প্রতিনিধিত্বকারী অঞ্চল ও চাঁদপুর সবচেয়ে কম।

পর্তুগালে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ থাকা সত্ত্বেও এই বাংলাদেশিরা বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছে। তারা সম্পত্তি ক্রয়, স্বজনদের টাকা পাঠানো, সন্তানদের তাদের দাদা-দাদি, নানা-নানির সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য পাঠানো ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন যেমন: কোরবানি করা, বিয়ে ইত্যাদি পালন করে (স্কিলার ২০০৪), যৌথ পরিবারের এক অংশ পর্তুগালে থাকা সত্ত্বেও তারা একে অপরের প্রতি দায়িত্বশীল।১৫

দীর্ঘ দূরত্বের জাতীয়তাবাদ ও স্মৃতির রাজনীতি, আরেকটি উদাহরণ হলো স্বদেশি রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া। অভিবাসন ছাড়াও আঞ্চলিক ইতিহাস, লিসবনে মাতৃভাষা দিবস পালন করা বহুজাতিক রাজনীতির কাজ হিসেবে বিবেচিত হয়। পর্তুগালে তিনটি রাজনৈতিক দল রয়েছে: পর্তুগাল আওয়ামী লীগ, পর্তুগালের বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী দল এবং ইসলামী ফোরাম জামায়াতে ইসলামী।১৬

এসব দল সফল প্রবাসী ও অগ্রদূতরা পরিচালনা করে। অভিবাসনের আগে এর নেতারা বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ইসলামি ফোরাম শুধু বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীকে নয়, নতুন যারা রাজনীতিতে যোগ দিয়েছে তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করেছে। অধিকাংশ অভিবাসী বাংলাদেশি শিশু যারা পর্তুগালে জন্মগ্রহণ করেছে অথবা ছোট থেকে আছে তারা রাজনীতিতে আগ্রহী নয় (বাংলাদেশ ও পর্তুগাল উভয় জায়গায়)। যারা আগ্রহী তারা রাজনীতিতে অংশগ্রহণ শুরু করেছে, যেমন ইসলামিক পার্টি ফোরাম, যা ইউরোপের অন্যান্য কেসের মতো (জেটলিন দেখুন: অ্যালেক্সান্ডার ২০১৩)।

প্রত্যেক দল বাংলাদেশের প্রধান অনুষ্ঠানগুলো যেমন: ভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, নববর্ষ আলাদাভাবে উদ্যাপন করে এবং অনেক ক্ষেত্রে দলের বিশেষ কোনো দিন (যেমন আওয়ামী সমর্থকদের জন্য জেল হত্যা দিবস)১৮ উদ্যাপন করে। ইসলামিক ফোরামের ক্ষেত্রে শুধু ভাষা দিবস পালিত হয়।

ফারুক১৯ ১৯৯০ সালে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০০২ সালে পর্তুগালে তাঁর মা তিন ভাইয়ের সঙ্গে বাবার (আনোয়ার) কাছে যান, যিনি ১৯৯৬ সালে পর্তুগালে অভিবাসী হয়েছেন। ফারুক ১১ গ্রেড পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন কিন্তু কিছু পারিবারিক জটিলতার কারণে লিসবনে একটি পিত্জার দোকানে কাজ করতে থাকেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সমর্থক হিসেবে আসার কারণে তিনি পর্তুগালের মুসলিম ফোরামের দিকে ঝুঁকছেন। লিসবনে ভাষা দিবসে তাঁর সমালোচনার মধ্যে তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট, ‘আমরা মুসলমানরা সবাই এক এবং একই সম্প্রদায়ের কিন্তু আমাদের মধ্যে কেউ কেউ বিশ্বাস করে আমাদের মধ্যে কাল্পনিক লাইন আছে, যা আমাদের পৃথক করে।’২০

ফারুকের মতে, অন্যান্য ইসলামিক ফোরামের অন্য সদস্যদের মতে, বাঙালি ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ মুসলমানদের বিভাজক হিসেবে অনুভূত হয়। এখান থেকে বোঝা যায় যারা একুশে ফেব্রুয়ারি অথবা অন্যান্য অনুষ্ঠান আয়োজন করে তারা ভবিষ্যতের চেয়ে অতীত নিয়ে বেশি চিন্তা করে বলে অভিযুক্ত।

যাঁরা শহীদ দিবস উদ্যাপন করেন তাঁরা সাধারণত বাংলাদেশি দোকানে তা ঘোষণা করেন মালিকের রাজনৈতিক সমর্থন বোঝানোর জন্য, যদি কোনো দোকানে ভাষা দিবস বিএনপির মাধ্যমে আয়োজন করা হয় তাহলে একই আয়োজন আওয়ামী লীগ দ্বারা করা হয় না।

এসব অনুষ্ঠান সাধারণত ভাড়া করা হোটেলের হল, প্রার্থনা রুম বা রেস্টুরেন্টে করা হয় এবং এটি রাজনৈতিক র্যালি হিসেবে একই দলের অতিথিদের এবং অন্য দেশে বাসকৃতদেরও নিমন্ত্রণ করা হয়। ২০০৫ সালে যখন লিসবনের মুন্ডিয়াল হোটেলের কনফারেন্স রুমে পর্তুগাল বিএনপি ভাষা দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজন করে তখন বেলজিয়ামের বিএনপির একজন প্রতিনিধি প্রধান অতিথি ছিলেন। এভাবে পর্তুগালের রাজনৈতিক দল অন্যান্য ইউরোপিয়ান দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে একই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেও সম্পর্ক বজায় রাখে।

এসবই বহুজাতিক রাজনৈতিক এলাকার অংশ। একটি বহুজাতিক দেশ, যেখানে ইউরোপের অন্যান্য অংশের একই রকম আন্দোলনই নয় বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলও এর অন্তর্ভুক্ত। অনেক লেখক (ইয়েড ও গার্বিন ২০০৬, কাবির ২০০০, সিদ্দিকী ২০০৪) দেখিয়েছেন ব্রিটিশ বাংলাদেশি ও বাংলাদেশি অভিবাসনের রাজনৈতিক গুরুত্বের কারণে যুক্তরাজ্য রাজনৈতিক কার্যকলাপের ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০০৩ সালে আওয়ামী লীগ পর্তুগাল লীগের ইউরোপিয়ান দেশগুলোর প্রতিনিধিদের একটি সভা সংগঠিত করে। ২০০৩ সালের ৫ আগস্ট দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী বিএনপি/জামায়াতে ইসলামী দলের (চারদলীয় জোটের)২১ সদস্য হিসেবে লিসবন দর্শন করেন এবং লিসবন মসজিদে জামায়াতে ইসলামী সমর্থকদের দ্বারা গৃহীত হন। ২০১০ সালের ১০ অক্টোবর পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি সরকারি সফরে পর্তুগাল সফর করেন এবং সেখানকার আওয়ামী লীগের সদস্যদের দ্বারা গৃহীত হন।

এসব শুধু বাংলাদেশ ও তার ঐতিহাসিক দিবসের অনুষ্ঠান উদ্যাপন নয়, তারা দীর্ঘ দূরত্বের জাতীয়তাবাদ (এন্ডারসন ১৯৯৮, স্কেলার ও ফোরন ২০০১) যেখানে বাঙালি নিরপেক্ষতাবাদ, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ও রাজনৈতিক ইসলাম অন্তর্ভুক্ত তা প্রতিদ্বন্দ্বী সংস্করণের জন্য স্পেস হিসেবে ব্যাখ্যা করা। এসব প্রকল্পের শুধু মতাদর্শগত ভিত্তি নিয়ে নয় বরং এর বৈধতা নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে পর্তুগালে। এভাবে করার মাধ্যমে প্রত্যেক দলের মতাদর্শিক অবস্থান ব্যাখ্যা করে।

এটা দুটি ঘটনার দ্বারা চিত্রায়িত করা যায়। একটি ২০০৩ সালের এবং আরেকটি ২০১৩ সালের প্রথম দিকের ঘটনা। প্রথমটি হলো ২০০৩ সালের গ্রীষ্মে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর লিসবন সফর। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের সদস্য। তিনি চারদলীয় জোট থেকে নির্বাচিত হয়েছেন।২২ প্রাথমিক সিদ্ধান্ত ছিল এমপি হিসেবে বাংলাদেশি মসজিদ ও মার্টিম মুনিজ স্কয়ারে ব্যবসা পরিদর্শন করা কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ গোষ্ঠীর আন্দোলনে এটি বাতিল হওয়ার কথা ছিল। এই সফরের বিরুদ্ধে প্রধান যুক্তি ছিল ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে তাঁর ও তাঁর দলের ভূমিকা।

আমরা এমপির সফর সম্পর্কে কথা বলছিলাম, যখন মতিউর বলল একজন ইসলামিক পার্টির সদস্য হিসেবে তিনি রাজনৈতিকভাবে কিছু সঠিক কথা বলেছেন। কিন্তু বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে তিনি সম্পূর্ণ ভুল ছিলেন, সত্য হলো বাংলাদেশের মানুষরা সম্পূর্ণ ভিন্ন ভাষায় কথা বলে, ভিন্ন খাবার খায়, কাপড়চোপড় আলাদা, তারা কেন একসঙ্গে থাকবে? কেবল একই ধর্ম বলে? কিন্তু যেখানে এটাও ভিন্ন। এভাবে জামায়াতে ইসলামী যে যুক্তি দিয়েছে মুসলমানরা আলাদা থাকতে পারে না, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।২৩

আরেকটি উদাহরণ হলো আমিনের সঙ্গে কথোপকথনের উদ্ধৃতাংশ, যিনি ঢাকা জেলার, ২০০২ সালে পর্তুগালে এসেছেন:

‘অনেক বাংলাদেশি এই এমপিকে পর্তুগালে চায় না। তাদের বক্তব্য মতে, আওয়ামী লীগ সমর্থকদের মতে, সাঈদী বিশ্বাসঘাতক, কারণ স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছেন, পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন হতে পারে না, সে যুক্তি দেখিয়েছেন, যদিও তারা ইসলামিক দল কিন্তু তারা যা বলে তা করে না।’২৪

একই দিনে পরবর্তী সময়ে, ওসমান দেলাওয়ারের সমালোচনা করেছেন, কারণ তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় রাজাকার হিসেবে অনেক বাঙালিকে হত্যায় সাহায্য করেছেন। ওসমানের জন্য দেলাওয়ারের লিসবন সফর মেনে নেওয়া অনেক কঠিন, কারণ তিনি তাঁর চাচাকে কেরানীগঞ্জের মুক্তিবাহিনীতে যুদ্ধ করতে দেখেছেন এবং তা মনে রেখেছেন। তাঁর স্পষ্ট মনে আছে তাঁর দাদির সঙ্গে তাঁর চাচার গোপন সাক্ষাত্। কেউ তাঁর উপস্থিতি টের পায়নি। ওসমান স্বতন্ত্রভাবে ওই দিন মনে রেখেছেন এবং তিনি কীভাবে কাপড় পরেছিলেন, একটি পুরোনো ন্যাকড়া ও একটি রাইফেল। তিনি কখনোই ওই দিনটি ভুলবেন না!২৫

ওসমান ২০০২ সালে পর্তুগাল এসেছেন অনেক দিন জাপান ও সৌদি আরবে থাকার পর। তিনি আগে কেরানীগঞ্জে যুবলীগ করতেন। দেলাওয়ারের উপস্থিতি তাঁর জন্য অসহনীয়, কারণ তিনি রাজাকার হিসেবে স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ভূমিকা পালন করেছেন, যা শত মানুষের প্রাণ নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে তাঁর উপস্থিতি তাঁর ব্যক্তিগত অতীতের দ্বন্দ্বের সঙ্গেও বিদ্যমান। এ ক্ষেত্রে তাঁর চাচা, যার ফলাফল শুধু অসংখ্য বাঙালিকে নয়, তাঁর নিজের পরিবারকেও ভুগতে হয়েছে।

দ্বিতীয় ঘটনাটি হলো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ট্রায়াল এবং লিসবনে এর প্রতিবিম্ব।২৬ এই প্রক্রিয়ার সময় ফারুক বলেছেন:

অনেক সাক্ষী যাঁদের কোর্টে আনা হয়েছে তাঁরা পরে স্বীকার করেছেন যে তাঁদের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল জামায়াত ও সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য। অন্যদিন আমিন লিসবনে একটি জনসভা ডাকল এটা ব্যাখ্যা করার জন্য যে জামায়াতে ইসলামী কখনোই যুদ্ধ সম্পর্কে কোনো অফিশিয়াল অবস্থান নেয়নি। তাঁর মতে, জামায়াত-সমর্থকদের মধ্যে কিছু যুক্ত মুসলিম দেশ সমর্থন করে কিন্তু অন্যরা মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি ছিল। আমিন আরও বলেন, দেলাওয়ার রাজাকার হিসেবে থাকতে পারেন না, কারণ তাঁর তখন মাত্র ১৬ বছর বয়স।২৭, ২৮

এরপর এখন যেখানে লিসবনে বাংলাদেশি এম্বাসি রয়েছে তার সামনে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়।

দুই ক্ষেত্রেই ঝুঁকি হলো বিতর্কিত ধারণা অতীত সম্পর্কে এবং তাদের ভূমিকা সম্পর্কে হেকিংস (১৯৯৫) যাকে বলেছেন স্মৃতির রাজনীতি। এই ধারণা আগে দিদিয়ের ফাসিন ‘স্মৃতির বস্তুগত উপস্থিতি’ (ফাসিন ২০০৮: ৩১৬) হিসেবে দেখিয়েছেন। কিন্তু কেন এসব বিতর্ক? এখানে ঝুঁকিপূর্ণ কী আছে? দীর্ঘ দূরত্বের জাতীয়তাবাদ ধারণাটি অভিবাসীদের স্বদেশি রাজনীতির ক্ষেত্রে ব্যবহূত হতো (স্কিলার ও অন্যান্য ১৯৯৪, ভারটোভেক ২০০৯, ইন্টার এলাইয়া দেখুন)। কিন্তু এখানে আমি, অন্যদিকে, দীর্ঘ দূরত্বের জাতীয়তাবাদ স্মৃতির রাজনীতিতে যুক্ত তা দেখিয়েছি এই পেপারে। বিদেশ অভিবাসীদের জন্য সম্পত্তি সম্মানের জায়গা, যা তার দেশে আত্মীয়দের কাছে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখে (গার্ডনার ১৯৯৩ দেখুন)। এটি জালালের সঙ্গে একটি স্পষ্ট কথোপকথন যিনি ২০০২ সাল থেকে পর্তুগালে বাস করেন:

জামায়াতিরা পর্তুগালে তাই করছে যা বাংলাদেশে করেছে। তারা অভিবাসীদের ভোটের জন্য রাজি করানোর চেষ্টা করেছে এবং এভাবে তাদের রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তি পরিবর্তন করেছে। পরে যখন এসব অভিবাসী দেশে যায়, যেহেতু তারা গুরুত্বপূর্ণ, তাদের আত্মীয়স্বজনকে তাদের ভোট বদল করার জন্য প্রভাবিত করে।২৯

যদিও জালাল রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নন, তবে তাঁর আওয়ামী লীগের জন্য সহমর্মিতা আছে। বাংলাদেশি অভিবাসীদের কাছে পৌঁছানো হলো পর্তুগালের মতো বিভিন্ন দেশে, যেমন যুক্তরাজ্যে, নতুনভাবে রাজনৈতিক প্রভাব সৃষ্টি।

একটি উপায় হলো কিছু প্রতিষ্ঠান, যেমন মসজিদ ও প্রতিনিধিত্বমূলক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ রাখা।৩০

‘সম্প্রদায়’ তৈরি

একটি উদাহরণ হলো প্রবাসীর লিসবন কমিউনিটি তৈরি এবং এমন এলাকায় নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা। প্রাথমিক চিত্র পর্তুগাল পাবলিক ডোমেইনে বাংলাদেশি ‘সম্প্রদায়’ তৈরি করা, যেখানে বাংলাদেশি সাংস্কৃতিক প্রতীক, যা অভিবাসী প্রতিনিধিত্বের রাজনৈতিক গতিশীলতায় দেখা যায়। লিসবনে বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশন সৃষ্টির ইতিহাস প্রকাশিত ক্ষেত্র। মানসের মতে, একজন প্রবর্তক, যিনি আশির দশকের শেষে পর্তুগালে এসেছেন এবং পর্তুগালে আওয়ামী লীগের একজন নেতা:

অ্যাসোসিয়েশন সৃষ্টির ব্যাপারে লিসবনে আমরা তেরোজন একটি ডিনারে অংশ নিই। সবকিছুই ঠিকভাবে চলছিল, যতক্ষণ না এর প্রেসিডেন্ট নিউটনের সিদ্ধান্ত এসেছে। তারপর সবকিছু জগাখিচুড়ি হয়ে গেল। তাদের মধ্যে একজন বলল, শুধু তাঁর বয়স বেশি এবং তিনি একজন ডাক্তার দেখে তাঁর নেতৃত্বের অধিকার ও ক্ষমতা বেশি হয়ে গেল! কিন্তু সবাই এটা মানে না।৩১

পর্তুগাল-বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক ইউনিয়ন গঠিত হয় এই প্রথম সভার পরে। পর্তুগাল আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল পর্তুগিজ প্রতিষ্ঠান যেমন: হাইকমিশনার ফর ইমিগ্রেশন অ্যান্ড এথনিক মাইনরিটিজ৩২, সীমান্ত পুলিশ ইত্যাদির কাছে বাংলাদেশিদের প্রতিনিধিত্ব করা।

এটা বিভিন্ন জরুরি জাতীয় দিবস যেমন: ভাষা দিবস, নববর্ষ ইত্যাদি সাংস্কৃতিক আয়োজন করার দায়িত্বেও ছিল। উদাহরণস্বরূপ ২০০৩ সালে বাংলাদেশি দূত, প্যারিসের বাংলাদেশি অ্যাম্বাসেডর ও বর্ডার পুলিশের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে লিসবনের একটি হোটেলে ভাষা দিবস পালিত হয়। অনুষ্ঠানে বাংলা গান, কবিতা ও বক্তৃতা দেওয়া হয়।

এর প্রেসিডেন্ট ও নির্বাহী কমিটির মতে, এর লক্ষ্য হলো পর্তুগিজ পাবলিক ডেমোইনে বাংলাদেশিদের প্রতিনিধিত্ব করা, যা ২০০৭ সালে লিসবনে ২৬ মার্চের উদ্যাপনে উদ্বোধনী ভাষণে বলা হয়েছে।

আমি ব্যক্তিগতভাবে দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব নিয়ে কৃতজ্ঞ। আমরা অনেক দূর থেকে এসেছি কিন্তু আমাদের সংস্কৃতি, ভাষা, ঐতিহ্য বিনিময়ের গুরুত্বের ওপর জোর দিতে পারি না। যতক্ষণ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হলো তখন বললাম! ৫০০ বছর আগে ভাস্কো দা গামা আমাদের দেশে এসেছিলেন এবং আমরা তাকে আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেছিলাম। ৫০০ বছর পর আমরা এখানে এসেছি এবং আমরা আশা করি আপনারাও আমাদের আন্তরিকভাবে গ্রহণ করবেন। প্রেসিডেন্ট সব বাংলাদেশিকে অভিনন্দন জানালেন। সম্প্রতি আমরা এখানে প্রায় চার হাজার এবং আমরা এখানে কাজের মাধ্যমে অবদান রাখি। আমরা সামাজিক নিরাপত্তা দিই। আমরা ট্যাক্স দিই, সংক্ষেপে আমরা পর্তুগালের অংশ। আমি দুদেশের মধ্যে চিন্তা-চেতনা ও সংস্কৃতির বিনিময় চাই। আজ আমাদের ৩৫তম স্বাধীনতাবার্ষিকী এবং আমরা বলতে চাই: স্বাধীনতা দীর্ঘজীবী হোক এবং আমাদের স্বাধীনভাবে বাঁচতে দেওয়া হোক।৩৩

আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সমর্থকেরা পর্তুগাল-বাংলাদেশি সাংস্কৃতিক ইউনিয়নের সমালোচনা করেছে। ওপরে বর্ণিত এর লক্ষ্য থাকা সত্ত্বেও ইউনিয়নেও প্রথম যে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং এর লক্ষ্যে সন্দেহজনক। মাহমুদের মতে, এর ভাইস প্রেসিডেন্ট, আমরা এক, আমরা বাংলাদেশি। আমরা পর্তুগালে কতজন আছি? ৩০০০ অথবা ৩৫০০ এবং আমাদের তিনটি দল!৩৪

এমন বিবাদ ও বিতর্ক সত্ত্বেও ইউনিয়নেও কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশি ও পর্তুগিজ প্রতিষ্ঠানে যারা অভিবাসন নিয়ে কাজ করে তার একমাত্র অংশগ্রহণকারী ২০১০ সালে অনেক অনিশ্চয়তার পর সব দল একসঙ্গে একটি নতুন অ্যাসোসিয়েশন করার জন্য প্রস্তুতি নিতে লাগল। এর ধারণা একজন বাংলাদেশি সংসদ সদস্য থেকে এসেছে, কিছু অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশ সফরের সময় একটি সভা করেছিল। ২০১০ সালে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পর্তুগাল সফরের সময় কথা দিয়েছিলেন যে এর লক্ষ্য ছিল প্রবাসীদের প্রতিনিধিত্ব করার নতুন প্রতিষ্ঠান, যা পর্তুগিজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে লিয়াজোঁ করতে পারবে।

অনেকগুলো সভার পর লুসো-বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশনের নতুন নির্বাহী কমিটি নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হলো, যা শুধু নির্বাচনের পরই লিপিবদ্ধ করা হবে। লিসবনে চতুর্থ স্বাধীন বাংলাদেশি গোষ্ঠী, যাদের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নেই, তাদের দ্বারা সম্পূর্ণ নির্বাচনপ্রক্রিয়া ভোট গ্রহণ আঠারো বছরের বেশি বয়সী বাংলদেশিদের লিপিবদ্ধকরণ এবং প্রার্থীদের তালিকা তৈরি সম্পন্ন করতে হবে। এই চতুর্থ দল, যা বন্ধুদের বন্ধু নামে পরিচিত, ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

এই লেখার শুরুতে বলা হয়েছে ২০১১ সালের ভাষা দিবস এই চতুর্থ দল আয়োজন করছে। একুশে ফেব্রুয়ারি ‘বন্ধুদের বন্ধু’র সব সদস্য একই লাল-সবুজ টি-শার্ট পরেছিল।

সব দল এটাতে আসন্ন নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে গ্রহণ করেছে। সবার জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ছিল এবং শহীদ মিনারে ফুল এবং ভাষাশহীদদের প্রতি সম্মান জানানোর মাধ্যমে এটি উদ্যাপন করা হয়।

নির্বাচনের জন্য তিনটি তালিকা তৈরি হয়েছে। আগের বাংলাদেশ পর্তুগাল সাংস্কৃতিক সংগঠনের নির্বাহী কমিটির সদস্যরা ‘নীল তালিকা’ তৈরি করেন। ক্যাম্পেইনের সময় বিকেলের চা খেতে খেতে মানস বলেন:

এই তালিকা সব বাংলাদেশিকে শুধু আওয়ামী সমর্থকদের জন্য নয়। নইলে আমরা নির্বাচন হারানোর ঝুঁকিতে থাকব!৩৫

এটা সত্ত্বেও সমালোচক ও যাঁরা সমালোচনাকারী নন উভয়ের জন্য এটি ‘আওয়ামী লীগের তালিকা’ এবং এই গোষ্ঠী তাদের এই ইমেজ থেকে আলাদা হতে পারবে না। তথাপি মানস সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রার্থী এবং তিনি এমন একজন যিনি সবচেয়ে বেশি ভোট পাবেন। সবাই বুঝতে পারল তিনি অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী।

দ্বিতীয় তালিকায় বিএনপি ও ইসলামিক ফোরাম দুটোই অন্তর্ভুক্ত এবং এটি ‘নীল তালিকা’র জন্য প্রধান প্রতিযোগিতা। এটা ‘সবুজ তালিকা’ হিসেবে পরিচিত এবং এতে পর্তুগাল বিএনপির প্রধান প্রতিনিধির মেয়ের জামাই। কিছু গুরুত্বপূর্ণ লুসো-বাংলাদেশি উদ্যোক্তা এবং জামায়াতে ইসলামীর সমর্থকেরা অন্তর্ভুক্ত।

শেষে আরেকটি ছোট তালিকা রয়েছে, কিছু স্বাধীন প্রার্থীর যারা ব্যক্তিগত বিরোধের কারণে পরিবার থেকে আলাদা হয়েছে এবং যারা সাবেক আওয়ামী সদস্য।

মোজাম্বিকের পর্তুগিজ মুসলিমের লিসবন হোটেলে ১০ এপ্রিল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ব্যালট বন্ধ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যেক দলের প্রার্থী এবং অন্য বাংলাদেশিরা ফলাফলের জন্য অপেক্ষায় ছিল, যা ভোর তিনটা বাজিয়েছে। সব ধরনের প্রত্যাশার বিরুদ্ধে সবুজ তালিকা বিজয়ী হয়। কয়েক মাসের প্রস্তুতির পর লুসো-বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশন তৈরি হয়।

কিন্তু আগে ব্যাখ্যা করা শহীদ দিবস এবং সম্প্রতি সৃষ্ট অ্যাসোসিয়েশনের মধ্যে সম্পর্ক কী? এবং এটি স্থানীয় ও বহুজাতিক রাজনৈতিক কার্যকলাপ সম্পর্কে কী বলে? ২০১১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি উদ্যাপন ছিল নির্বাচনী প্রক্রিয়ার প্রস্তুতি যা নতুন ‘প্রণালির পর্তুগাল কমিউনিটি’ গঠনে ভূমিকা রাখে। এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশি সাংস্কৃতিক প্রতীকগুলোর নাগরিকত্বের ওপর ভিত্তি করে পর্তুগিজ অভিবাসন রাজনীতিতে অংশগ্রহণ জরুরি।

যাই হোক একই সময়ে বাংলাদেশি সাংস্কৃতিক প্রতীক ও পরিচয় বাংলাদেশিদের মধ্যে শুধু বাংলাদেশ নয়, বিদেশেও বিতর্কিত হয় এবং এটি রাজনীতির স্মৃতিতে দৃশ্যমান। অর্থনৈতিক গুরুত্ব ও বিদেশের সফল চিত্রের কারণে দেশের আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।

শেষ কথা

২০১১ সালের শহীদ দিবস উদ্যাপনের ক্ষেত্রে বর্ধিত পদ্ধতি (গ্লাকম্যান ১৯৫৮) ব্যবহার করে এই লেখাটি বাংলাদেশ ও পর্তুগালের মধ্যে বহুজাতিক রাজনৈতিক দিক প্রকাশ করেছে।

একদিকে বাংলাদেশি বহুজাতিক ক্ষেত্র যুক্তরাজ্য, বাংলাদেশ ও অন্যান্য জায়গায় শহীদ মিনার ও একুশের মাধ্যমে সংযোগ স্থাপন করে। অন্যদিকে, এসব পরিচয় ও প্রতীক বাংলাদেশিদের অবসান অনুযায়ী রূপান্তরিত হয়। অ্যালেক্সান্ডার (২০১৩) এবং ইয়েড ও গার্বিনের (২০০৬) ব্রিটিশ কেসের সঙ্গে লিসবনের বিতর্কের মিল রয়েছে। অ্যালেক্সান্ডার (২০১৩) তার গবেষণায় দেখিয়েছেন যে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশি প্রতিনিধিত্বের প্রতিষ্ঠান। সঙ্গে লন্ডনের শহীদ মিনারের রেপ্লিকা বর্ণবাদবিরোধী সংগ্রামের অংশ ছিল। পর্তুগালে বাঙালি ও বাংলাদেশি প্রতীকগুলো অধিবাসী প্রতিধিত্বের জন্য আন্তসাংস্কৃতিক রাজনীতিতে অংশ নিয়ে ‘জাতীয় সম্প্রদায়’ হিসেবে তুলে ধরার ক্ষেত্রে ব্যবহূত হয়। এসব বিতর্ক সংক্ষেপে দীর্ঘ দূরত্ব জাতীয়তাবাদের অস্তিত্ব প্রকাশ করে।

এভাবে ২০১১ সালের ভাষা দিবস উদ্যাপন একদিকে বাংলাদেশিদের বিশেষ জাতীয় সম্প্রদায় হিসেবে পর্তুগিজ অভিবাসনে অংশগ্রহণের সঙ্গে যুক্ত, অন্যদিকে এসব অংশগ্রহণকারী বহুজাতিক রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ধারাবাহিক সম্পৃক্ততার

সঙ্গেও যুক্ত।

অনুবাদ: জোশিতা জিহান অর্নব

টীকা ও তথ্যসূত্র

১. আমি পর্তুগিজ বিজ্ঞান ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, যা ছাড়া এই লেখাটি সম্ভব হতো না। এর  আগের ভার্সনটি লন্ডনে ২০১৩ সালের ২৭ এপ্রিল ব্রিকলেন সার্কেলের তৃতীয় বার্ষিক কনফারেন্সে এবং লিসবনে ২৫-২৮ জুলাই, ২০১২ সালে দক্ষিণ এশিয়ান স্টাডিজের ২২তম ইউরোপিয়ান কনফারেন্সে কল্পনায় বাংলাদেশ শিরোনামে (imagining Bangladesh) উপস্থাপন করা হয়েছিল। যাঁরা মন্তব্য করেছেন তাঁদেরও ধন্যবাদ।

২.          একুশে হলো ফেব্রুয়ারি মাসের ২১ তারিখ। এদিনে মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়। একুশে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বইমেলার নামও, যা ফেব্রুয়ারি মাসে হয়।

৩.         লিসবনের এই এলাকায় পর্তুগিজ আঞ্চলিক অ্যাসোসিয়েশন ও ক্লাব হাউস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেগুলো শুধু অ্যাসোসিয়েশনের কাজকর্মের জন্য ব্যবহূত হয় না, জাতিগত কাজের জন্যও ভাড়া দেওয়া হয়।

৪.          পরবর্তী সময়ে আমরা দেখি যে আগে লিসবনে বাংলা নববর্ষ ও ভাষা দিবস ছাড়াও অন্যান্য অনুষ্ঠান হতো কিন্তু কোনোটিই ২০১১ সালের অনুষ্ঠানের মতো দৃশ্যমান হয়নি।

৫.          বহুজাতিক জনসাধারণের এলাকা ধারণাটি জন বোয়েন (২০০৪) এবং ন্যান্সি ফ্রেসার (২০০৭)-এর কাজে রয়েছে।

৬.         ব্রিটিশ বাংলাদেশি বহুজাতিক অভ্যাস এবং অভিবাসনের তৃতীয় স্পেসের মধ্যে সম্পর্ক জানতে জেটলিন (২০১৩) দেখুন।

৭.          দীর্ঘ দূরত্বের জাতীয়তাবাদ ধারণাটি প্রথম বেনেডিক্ট এন্ডারসন ১৯৯৮ সালে দেন এবং পরে নিনা গ্লিক শিলার এবং জর্জ ফোরন (২০০১) হাইতিয়ান আমেরিকান এবং বহুজাতিক রাজনৈতিক সক্রিয়তা সম্পর্কে তাঁদের গবেষণায় তত্ত্ব হিসেবে দেন। শিলার এবং ফোরনের (২০০১:৪) মতে, দীর্ঘ দূরত্বের জাতীয়তাবাদ হলো রাজনৈতিক সম্প্রদায়ের সদস্য হওয়ার দাবি, যা দেশের বাইরে প্রসারিত হওয়ার দাবি। এটি জনগণকে রাজনৈতিক কাজে যাওয়ার জন্য বাধ্য করতে মানসিক সংযুক্তি হিসেবে কাজ করে। এ ধরনের  জাতীয়তাবাদের পাঁচটি প্রধান বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

            i) এটা অনুমান করে যে জাতীয় সীমানা একাত্মতার সীমানা নির্ধারণ করে না। ii) এটা শুধু কাল্পনিক এবং আবেগপ্রবণ নয়, রাজনীতি ও ক্রিয়াকলাপের সেট। iii) দীর্ঘ দূরত্বের জাতীয়তাবাদীদের লক্ষ্য হলো বহুজাতিক রাষ্ট্র তৈরি। iv)  কন্টেক্সট গ্রহণ ও প্রদানের মধ্যে এর উত্থান এবং প্রকাশ নির্ভর করে। এবং সবশেষে v) দীর্ঘ দূরত্বের জাতীয়তাবাদ এবং ডায়াসপোরিক ফেনোমেনা একই সঙ্গে চলে কিন্তু স্বতন্ত্র থাকে।

৮.         বহুজাতিক সামাজিক ক্ষেত্র ধারণাটি গ্লিক শিলার দ্বারা ১৯৯২ সালে প্রথম প্রস্তাবিত হয়। এটি কীভাবে বহুজাতিকবাদ মানুষের সম্পর্ক পরিবর্তন করে তা বর্ণনা করে (ভারতোভেক ২০০৯: ১২), (হেকিং ১৯৯৫: ২১১)।

৯.         আয়ান হেকিংয়ের মতে, ব্যক্তিগত স্মৃতির রাজনীতি হলো একটি নির্দিষ্ট ধরনের রাজনীতি। এটা জ্ঞানের চারপাশে নির্মিত ক্ষমতার সংগ্রাম। এর মাধ্যমে এটি নিশ্চিত হয় যে নির্দিষ্ট রকম জ্ঞান আহরণ সম্ভব। এই প্রতিদ্বন্দ্বী দাবির মধ্যে গভীর জ্ঞান আছে। যে জ্ঞানের স্মৃতি সত্য অথবা মিথ্যা উভয়ই হতে পারে। ক্ষমতার লড়াই জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে হয়, যেখানে বিপরীত পক্ষ গভীর জ্ঞানকে সাধারণভাবে নেয়। প্রত্যেক দিক অন্য দিকের বিপরীত। যারা ট্রমা থেকে উদ্ধার হয়েছে এবং যারা একে প্রশ্ন করেছে তাদের মোকাবিলার জন্য সঠিক ধরন।

১০.        অভিবাসী জনসংখ্যার ক্ষেত্রে পর্তুগিজ নাগরিকত্বের শাসন আন্তসাংস্কৃতিক নীতির ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। বিস্তারিত শেষের অধ্যায়ে দেখুন।

১১.        ১৯৪০ সালে ম্যাক্স গ্লাকম্যান তাঁর The Social Situation in Modern Jululand বইয়ে বর্ধিত কেস পদ্ধতি সম্পর্কে প্রস্তাব দিয়েছেন, যেখানে দক্ষিণ আফ্রিকার একটি সেতুর উদ্বোধন সম্পর্কে গবেষণা ছিল। প্রধান উদ্দেশ্য ছিল একটি ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া, যেখান থেকে বৃহত্ সমাজের সমাজবিদ্যাগত ধরন সম্পর্কে বিশ্লেষণ করা যায়। একই পদ্ধতি কয়েক বছর পর জে. সি. মিশেল (১৯৫৬) ব্যবহার করেছেন। নৃবিজ্ঞানের মধ্যে বর্ধিত কেস পদ্ধতির গুরুত্ব সম্পর্কে বিশ্লেষণের জন্য ইভেনস এবং এডেলম্যান (২০০৬) দেখুন।

১২.        এই লেখাটি নৃতাত্ত্বিক মাঠ গবেষণার তিনটি সময়ের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। প্রথমটি ২০০৩ সালে শুরু হয় এবং ২০০৬ সালে শেষ হয় এবং লিসবন বিশ্ববিদ্যালয়ে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানের ওপর পিএইচডি করা হয়। প্রথম কেসে পর্তুগাল এবং বাংলাদেশের নৃতত্ত্ব এবং ৭০টি সাক্ষাত্কার রয়েছে। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় কেস ছিল ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাসের শেষ পর্যন্ত এবং ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত। এই দুটি মাঠপর্যায়ের কাজ আগের উপাত্তের সঙ্গে আপডেট হয়েছে এবং সেখানে ২০টি ইন ডেপথ সাক্ষাত্কার ছিল (যার বেশির ভাগ দ্রাঘিমাংশ উপাত্ত সংগ্রহের জন্য আগের যোগাযোগে প্রয়োগ করা হয়েছে)।

১৩.        দেশ হলো ব্যর্থতা, দুর্নীতি এবং দারিদ্র্যের জায়গা, যা বিদেশের সমৃদ্ধি, সুভাগ্য এবং সফলতার জায়গার বিপরীত ধারণা। এটি প্রবাসী অভিজ্ঞতার সঙ্গে দীর্ঘ সম্পৃক্ত রূপক বহিঃপ্রকাশ (গার্ডনার, ১৯৯৩)। উত্তর আমেরিকায় স্থায়ী অভিবাসনসহ সিলেটিদের ব্রিটেনে অভিবাসনের অভিজ্ঞতা এবং মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক অভিবাসন থেকে ‘অভিবাসন সংস্কৃতি’ খুঁজে পাওয়া সম্ভব। ম্যাসেই ও অন্যান্য (১৯৯৩) এটিকে সংজ্ঞায়িত করেন এভাবে যে যারা অভিবাসন করে না তাদের অলস ও খারাপ বৈবাহিক চুক্তি হিসেবে দেখা হয়, যেখানে যারা বিদেশে থাকে তাদের ধনাঢ্য, সফল এবং সমৃদ্ধিসম্পন্ন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

১৪.        সর্বমোট ১৯৯৩ এবং ২০০৪ সালের মধ্যে তিনটি রেগুলারাইজেশন কর্মসূচি নেওয়া হয়, যেগুলো পর্তুগালের ভূকৌশলগত স্বার্থের সঙ্গে জড়িত (যেমন পর্তুগিজ ভাষাভাষী আফ্রিকান দেশগুলো) এবং শ্রমবাজারের (যেমন কনস্ট্রাকশন) কয়েকটি খাত থেকে সৃষ্ট চাপের উত্তর।

১৫.        পর্তুগাল ও বাংলাদেশে বসবাসকারী গোত্রের মধ্যে এই অচলাবস্থা কিছু দুশ্চিন্তা নিয়ে এসেছিল, বিশেষ করে যখন সন্তানদের শিক্ষা এবং দেশে বসবাসকারী আত্মীয়দের সম্পদ পাঠানোর ব্যাপারে বিরোধপূর্ণ দাবি উঠেছিল। পারিবারিক সম্পত্তি ভাগের সময় এটা বিশেষভাবে দৃশ্যমান হয়। সেই উত্তেজনাপূর্ণ মুহূর্তগুলোতে প্রবাসী কর্তৃক দেশের আত্মীয়দের মধ্যে সম্পদ পুনর্বণ্টনকে সাধারণ পুনর্বণ্টন হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল এবং প্রায়ই ভাইবোন এবং পিতামাতাদের মধ্যে তিক্ত দ্বন্দ্বের মাধ্যমে শেষ হয়েছিল।

১৬.        ইসলামিক ফোরামের ইতিহাসের জন্য দেখুন, ঈড এবং গার্বিন ২০০৬।

১৭.        তথাকথিত স্বাগতিক দেশে প্রবাসীদের সন্তানদের স্থান (বা সেদিক থেকে ঘাটতি) নিয়ে ঝামেলাপূর্ণ অনুমান থাকায় এই লেখায় ‘দ্বিতীয় প্রজন্মের’ মতো শ্রেণিবিন্যাসগুলো এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। এই ধারণার একটি সমালোচনামূলক আলোচনার জন্য দেখুন, আলি এবং অন্যান্য, ২০০৬।

১৮.       এই দিনটি ৩ নভেম্বর স্মরণ করা হয় এবং ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আওয়ামী লীগের চার নেতার হত্যাকাণ্ডকে মনে করিয়ে দেয়।

১৯.        আমার গবেষণা-সহযোগীদের পরিচয়ের সুরক্ষার জন্য তাদের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

২০.        মাঠগবেষণা টীকা, ২ মার্চ ২০১২।

২১.        চারদলীয় জোট বিএনপির নেতৃত্বে ১৯৯৯ সালে গঠিত হয়, যেখানে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি এবং ইসলামী ঐক্যজোটকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

২২.         তিনি জামায়াতে ইসলামীর সাংসদ।

২৩.        মাঠগবেষণা টীকা, ৫ আগস্ট ২০০৩।

২৪.        মাঠগবেষণা টীকা, ৬ আগস্ট ২০০৩।

২৫.        মাঠগবেষণা টীকা, ৬ আগস্ট ২০০৩।

২৬.        আইসিটির পরিপ্রেক্ষিতকরণে দেখুন, জেটলিন, এই বিশেষ সংখ্যায়।

২৭.         পরের দিন ফারুক ফেসবুকে সাঈদীর একটি ভিডিও শেয়ার করে।

২৮.        মাঠগবেষণা টীকা, ২০ ডিসেম্বর ২০১২।

২৯.        মাঠগবেষণা টীকা, ৪ আগস্ট ২০০৩।

৩০.        একটি তুলনামূলক কেসের জন্য দেখুন ওয়ের্বনার (২০০২)।

৩১.        মাঠগবেষণা টীকা, ২১ অক্টোবর ২০০৬।

৩২.        ২০০৭ সালে নামটি হাইকমিশনার ফর ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ইন্টারকালচারাল ডায়ালগে পরিবর্তিত হয়। এটি একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, যা অভিবাসন বিষয়ে পরামর্শ করে।

৩৩.       মাঠগবেষণা টীকা, ২৬ মার্চ ২০০৭।

৩৪.        মাঠগবেষণা টীকা, ১২ মার্চ ২০০৭।

৩৫.        মাঠগবেষণা টীকা, ১১ এপ্রিল ২০০৭।

গ্রন্থপঞ্জি

            Alexander, Claire (2013) 'Contested Memories: The Shahid Minar and the Struggle for Diasporic Space', Ethnic and Racial Studies, 36(4), pp. 590-610.

       Ali, Nasreen; Kalra, Virinder; Sayyid, Salmon (eds.) (2006) A Postcolonial People: South Asians in Britain, London: Hurst.

       Amit, Vered (2002) Realizing Community: Concepts, Social Relationships and Sentiments, London: Routledge.

       Anderson, Benedict (1998) The Spectre of Comparisons: Nationalism, Southeast Asia and the World, London: Verso.

       Appadurai, Arjun (1996) Modernity at Large: Cultural Dimensions of Globalization, Minneapolis: University of Minnesota Press.

       Arendt, Hannah (1968) The Origins of Totalitarianism, New York: Harcourt, Brace and Jovanovich, [1951].

       Bal, Ellen (2012) ‘‘Were We Born Here to Suffer?’ Constructing Notions of Belonging and Disengagement in Bangladesh’, paper presented in the 22nd European Conference on South Asian Studies, Lisbon.

       Baumann, Gerd (1996) Contesting Culture: Discourses of Identity in Multi-Ethnic London, Cambridge: Cambridge University Press.

       Bowen, John (2004) ‘Beyond Migration: Islam as a Transnational Public Space’, Journal of Ethnic and Migration Studies, 30(5), pp. 880-94.

       Calavita, Kitty (2005) Immigrants at the Margins: Law, Race, and Exclusion in Southern Europe, Cambridge: Cambridge University Press.

       Cohen, Anthony (1985) The Symbolic Construction of Community, London: Routledge.

       de Genova, Nicolas (2002) 'Migrant Illegality and Deportability in Everyday Life', Annual Review of Anthropology, 31(1), pp. 419-47.

       Eade, John (1989) The Politics of Community: The Bangladeshi Community in East London, Avebury: Aldershot.

       Eade, John; Garbin, David (2006) 'Competing Visions of Identity and Space: Bangladeshi Muslims in Britain', Contemporary South Asia, 15(2), pp. 181-93.

       Evens, T; Handelman, Don (eds.) (2006) The Manchester School: Practice and Ethnographic Praxis in Anthropology, Oxford: Berghahn Books.

       Fassin, Didier (2008) 'The Embodied Past: From Paranoid Style to Politics of Memory in South Africa', Social Anthropology, 16(3), pp. 312-28.

       Fog Olwig, Karen (2009) 'A Proper Funeral: Contextualizing Community among Caribbean Migrants', Journal of the Royal Anthropological Institute, 15(3), pp. 520-37.

       Fraser, Nancy (2007) ‘Transnationalizing the Public Sphere: On the Legitimacy and Efficacy of Public Opinion in a Post-Westephalian World’, Theory, Culture and Society, 24(4), pp. 7-30.

       Gardner, Katy (1993) 'Desh Bidesh: Sylheti Images of Home and Away'. Man, 28(1), pp. 1-15.

       Gardner, Katy; Sukur, Abdus (1994) '‘I´m Bengali, I’m Asian and I’m Living Here’: The Changing Identity of British Bengalis', in Roger Ballard (ed.), Desh Pardesh: The South Asian Presence in Britain, New Delhi: B.R. Publishing Corporation, pp. 142-64.

       Gluckmam, Max (1940) Analysis of a Social Situation in Modern Zululand, Rhodes-Livingstone Paper nº 28, Manchester: Manchester University Press.

       Glynn, Sarah (2006) 'The Spirit of 71: How the Bangladeshi War of Independence has Haunted Tower Hamlets', Socialist History Journal, 29, pp. 56-75.

       Hacking, Ian (1995) Rewriting the Soul: Multiple Personality and the Sciences of Memory, Princeton: Princeton University Press.

       Hall, Stuart (1997) 'The Spectacle of the ‘Other’', in Stuart Hall (ed.) Representation: Cultural Representations and Signifying Practices, London: Sage Publications, pp. 223-90.

       Kabeer, Naila (2000) The Power to Choose: Bangladeshi Women and Labour Market Decisions in London and Dhaka, London: Verso.

       Kibria, Nazli (2011) Muslims in Motion: Islam and National Identity in the Bangladeshi Diaspora, New Brunswick and London: Rutgers University Press.

       King, Russel; Lazaridis, Gabriella; Tsardanidis, Charalambos (eds.) (2000) Eldorado or Fortress? Migration in Southern Europe, London: Palgrave.

       Knights, Melanie (1996) 'Bangladeshi Immigrants in Italy: From Geopolitics to Micropolitics', Transactions of the Institute of British Geographers, 21(1), pp. 105-23.

       Mankekar, Purmina (2005) ‘India Shopping: Indian Grocery Stores and Transnational Configurations of Belonging’, in James Watson & Melissa Caldwell (eds.) The Cultural Politics of Food and Eating, Oxford: Blackwell, pp. 197-213.

       Mapril, José (2011) ‘The Patron and the Madman: Migration, Success and the (In)Visibility of Failure Among Bangladeshis in Portugal’, Social Anthropology, 19(3), pp. 288-96.

       Mapril, José (2014) ‘The Dreams of Middle Class: Consumption, Life-Course and Migration Between Bangladesh and Portugal’, Modern Asian Studies, 48(3), pp. 693-719

       Massey, Douglas; Arango, Joaquin; Hugo, Graeme; Kouaouci, Ali; Pellegrino, Adela; Taylor, Edward J. (1993) 'Theories of International Migration: A Review and Appraisal', Population and Development Review, 19(3), pp. 431-466.

       Meer, Nasar; Modood, Tariq (2011) 'How Does Interculturalism Contrast with Multiculturalism', Journal of Intercultural Studies, 33(2), pp. 175-96.

       Mitchell, J. C. (1958) The Kalela Dance: Aspects of Social Relationships among Urban Africans in Northern Rhodesia, Manchester: Manchester University Press.

       Schiller, Nina Glick; Bach, Linda; Szanton-Blanc, Christina (1992) 'Transnationalism: A New Analytic Framework for Understanding Migration', Annals of the New York Academy of Sciences, 645, pp. 1-24.

       Schiller, Nina Glick; Bach, Linda; Szanton-Blanc, Christina (1994) Nations Unbound: Transnational Projects, Postcolonial Predicaments, and Deterritorialized Nation-States, London: Taylor & Francis.

       Schiller, Nina Glick; Fouron, Georges (2001) George Woke Up Laughing: Long Distance Nationalism and the Search for Home, Durham: Duke University Press.

       Schiller, Nina Glick (2004) ‘Transnationality’, in David Nugent and Joan Vincent (eds.) A Companion to the Anthropology of Politics, Oxford: Blackwell, pp. 448-67.

       Siddiqui, Tasneem (2004) Institutionalising Diaspora Linkage: The Emigrant Bangladeshi in UK and USA, Dhaka: I.O.M.

       Vertovec, Steven (2009) Transnationalism, London: Routledge.

       Visram, Rozina (1986) Asians in Britain: 400 Years of History, London: Pluto Press.

       Werbner, Pnina (2002) Imagined Diasporas among Manchester Muslims, Oxford: James Currey.

       Zeitlyn, Benjamin (2006) Migration from Bangladesh to Italy and Spain, Dhaka: R.M.M.R.U.

       Zeitlyn, Benjamin (2013) ‘Desh Bidesh Revisited’, Identities, 20(3), pp. 253-69.