বাংলাদেশে জ্ঞান উত্পাদন: সিভিল সমাজের কতিপয় সমস্যা

সারসংক্ষেপ

এই প্রবন্ধে বাংলাদেশে নীতি প্রণয়নের জন্য জ্ঞান উত্পাদন এবং বিতরণের একটি প্রাতিষ্ঠানিক ও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ হাজির করা হবে। বাংলাদেশে জ্ঞান তৈরিতে অংশগ্রহণ করে এমন অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান নিয়েই কোনো গবেষণা হয়নি। ফলে এই প্রবন্ধে জ্ঞান তৈরির মাধ্যম এবং প্রতিবন্ধকতাসমূহ এবং একই সঙ্গে থিংক ট্যাংক এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজেদের এবং পরস্পরের মধ্যে জটিল কর্তৃত্ব এবং ক্ষমতার সম্পর্ককে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এই প্রবন্ধে দেখানো হয়েছে যে অভ্যন্তরীণ আর্থিক সম্পদের ঘাটতি এবং থিংক ট্যাংক ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর রাজনৈতিক সহযোজনের (cooption) ফলে বিদ্যায়তনিক স্বাধীনতা দুর্বল হয়ে পড়ছে, জ্ঞান তৈরির প্রক্রিয়া খণ্ডায়িত হচ্ছে এবং তা গবেষণাকে রাজনীতিবিমুখ রাখছে। কিছু কৌশলী লোকের ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে গবেষণার সঙ্গে নীতিমালার সম্পর্কসমূহ রূপলাভ করছে।

মুখ্য শব্দগুচ্ছ

সহায়তা-সামর্থ্য উন্নয়ন, সহায়তা কার্যকারিতা, সিভিল সমাজ, শাসনপ্রক্রিয়া এবং পাবলিক পলিসি, দক্ষিণ এশিয়া।

ভূমিকা

কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে সরকার কর্তৃক সিভিল সমাজের ভূমিকা সংকোচন একটি ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১৩ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং দুই দলের সহিংসতার পর একাধিক সংবাদপত্র, এনজিও, বিচারব্যবস্থা, পুলিশ বাহিনী, বিশ্ববিদ্যালয়, গণমাধ্যম এবং অ্যাক্টিভিস্টদের ওপর রাজনৈতিক চাপের বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে (গার্ডিয়ান, ২০১৫)। প্রতিবেদনগুলো এই বিষয়গুলোকে সিভিল সমাজের অস্তিত্বের প্রতি হুমকি হিসেবে বর্ণনা করেছে (ডেইলি স্টার, ২০১৫)। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ডেইলি স্টার-এ প্রকাশিত ‘সিভিল সোসাইটি স্ট্যান্স কামস আন্ডার ফায়ার’ শিরোনামের প্রবন্ধে তথ্য কমিশনার সিভিল সমাজ সংগঠনগুলোকে উন্নয়ন-সহযোগীদের অর্থে পরিচালিত হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি প্রশ্ন করেন, তারা কোন জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে? এবং কাদের কণ্ঠস্বরকে তুলে ধরছে? সিভিল সমাজের কর্মকদের (actor) জন্য কাজের ক্ষেত্র নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একটি সরকারের ব্যর্থতা বা অনিচ্ছা, জনগণের স্বাধীনতাকে হুমকির সম্মুখীন করতে পারে এবং একটি জায়মান (nascent) কর্তৃত্ববাদী সরকারব্যবস্থার লক্ষণ হিসেবে দেখা যেতে পারে (ভ্যান ডর ভর্গ এবং টরিন্ডথ, ২০১২)। হাবারমাসের (১৯৯৬, ৩৬৭) মতে, সিভিল সমাজের কর্মকেরা সামাজিক সমস্যাসমূহ জনপরিমণ্ডলে কীভাবে অনুরণিত হয় তার খোঁজখবর রাখেন এবং এ ধরনের প্রতিক্রিয়াগুলোকে শোধিত করে জনপরিসরে বর্ধিত আকারে প্রচার করেন। তবে রাষ্ট্রগুলো প্রায়ই সিভিল সমাজকে তাদের কর্তৃত্বের জন্য হুমকি হিসেবে কাজ করা বিরুদ্ধশক্তি হিসেবে দেখে। একটি সমাজের অরাষ্ট্রিক (non-state) প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে নিহিত সামাজিক ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ফুটিয়ে তোলার জন্য সিভিল সমাজে সক্রিয় সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে যাচাই করে দেখা গুরুত্বপূর্ণ। যেমন থাইল্যান্ড ও চিলিতে রাজনৈতিক সংগ্রামের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কাজে থিংক ট্যাংক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সিভিল সমাজের কর্মকেরা মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিল। ২০১৬ সালের প্রথম দিকে দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া বিক্ষোভ প্রদর্শনের ঘটনা একটি বিষয় প্রমাণ করে যে, রাজনৈতিক মতবিনিময় এবং প্রতিযোগিতার জন্য এখনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অতীব গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র।

এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে সিভিল সমাজ নিয়ে যে গবেষণাগুলো হয়েছে, সেগুলোর মূল লক্ষ্য ছিল ১৯৭১ সাল থেকে দরিদ্রদের সরাসরি সম্পদ এবং সেবা প্রদানে এনজিওগুলোর ভূমিকা বিশ্লেষণ এবং গণতন্ত্রায়ণ-প্রক্রিয়াকে এনজিওগুলো সহায়তা না ব্যাহত করেছে, সেই বিশ্লেষণ (ব্লেয়ার ২০০১)। যদিও ১৯৯০-এর দশকের পর থেকে উন্নয়ন জ্ঞানভাষ্যে (discourse) এনজিওগুলোর উপস্থিতি লক্ষণীয়। তবে আমার মতে, এগুলোকে বৃহত্ রাষ্ট্র ও পরিবারের মধ্যে অন্তর্বর্তী সাংগঠনিক ক্ষেত্র (হোয়াইট ১৯৯৪, ৩৭৯) অর্থাত্ নাগরিক সমাজের সমতুল্য ভাবা যায় না। বাংলাদেশে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক, আদর্শগত ও সাংস্কৃতিক সংগ্রামে এবং ১৯৯০ সালে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে মূল ভূমিকা পালন করেছিল (মনিরুজ্জামান ১৯৯২)। থিংক ট্যাংকগুলোর সাম্প্রতিক বিস্তার এবং সিভিল সমাজের একটি উল্লেখযোগ্য উপভাগ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সম্পৃক্ততা সত্ত্বেও, এই সম্পর্কিত রচনাবলিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ধারাবাহিকভাবেই উপেক্ষা করা হচ্ছে।

পুলিশ ও সামরিক বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি জ্ঞানকে নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার তার ক্ষমতা চর্চা করে। সরকারের সম্প্রচার নীতিমালা এবং সম্পাদকীয় নির্দেশনায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করার প্রবণতা আছে। একই সঙ্গে নীতিমালাকে প্রভাবিত করার সামর্থ্য সিভিল সমাজের আছে কি না, তাও প্রশ্নের সম্মুখীন (ডেইলি স্টার ২০১৪)। জ্ঞান উত্পাদন এবং বিতরণ একটি উচ্চমাত্রার রাজনৈতিক উদ্যোগ, যার সঙ্গে অসংখ্য সরকারি ও বেসরকারি অংশীদার যুক্ত এবং এই বিষয়টিই একটি স্বতন্ত্র গবেষণা হতে পারে। এই প্রবন্ধে আমি অ্যাকফের দেওয়া ‘জ্ঞান’-এর সংজ্ঞা ব্যবহার করব। অ্যাকফের (১৯৮৯) মতে জ্ঞান হচ্ছে ব্যবহারিক দক্ষতা, যা তথ্যকে নির্দেশনায় রূপান্তরিত হতে সম্ভবপর করে। আমি জ্ঞানকে তথ্য ও উপাত্ত থেকে ভিন্ন কিছু মনে করি। কারণ ঘটনা এবং সেগুলোর পরিবেশ পর্যবেক্ষণের ফলে যা উত্পন্ন হয়, তাই উপাত্ত এবং একটি ব্যবহারযোগ্য বা প্রাসঙ্গিক রূপ ধারণ করা ছাড়া এগুলো ব্যবহারযোগ্য নয় (রওলি ২০০৭)। অন্যদিকে একই ধরনের বর্ণনাত্মক বৈশিষ্ট্য থাকলেও, তথ্য কার্যকরভাবে উপাত্তের চেয়ে ভিন্ন। তথ্য প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য উপাত্তকে ব্যবহার করে।

এই প্রবন্ধে ওই সব স্বল্পচর্চিত প্রতিষ্ঠানের রাজনৈতিক অর্থনীতি আলোচনার প্রমিত চেষ্টা করা হয়েছে, যেগুলো দ্বারা সিভিল সমাজ গঠিত হয় এবং যেগুলো জ্ঞান উত্পাদনে একধরনের ভূমিকা পালন করে। এখানে দুই ধরনের প্রতিষ্ঠান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে: থিংক ট্যাংক এবং বিশ্ববিদ্যালয়। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর জ্ঞান উত্পাদনের সামর্থ্য কীভাবে এগুলোর সামাজিক-রাজনৈতিক অবস্থা দ্বারা প্রভাবিত হয় তাও এই প্রবন্ধের আলোচ্য বিষয়। ২০১৩ সালে সংগৃহীত প্রাথমিক উপাত্ত, শাসনের ক্ষেত্রে সিভিল সমাজের তাত্ত্বিক ভূমিকা এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও কাঠামোবিষয়ক পরোক্ষ (সেকেন্ডারি) রচনাবলির একটি পর্যালোচনার মাধ্যমে এই প্রবন্ধে দেখানো হয়েছে যে প্রাতিষ্ঠানিক রাজনীতি, রাজনৈতিক শক্তি এবং ব্যক্তিগত ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক সম্পর্কগুলোর ওপর খুব বেশি নির্ভরশীলতার কারণে থিংক ট্যাংক এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিরপেক্ষতা, স্বাধীনতা এবং দক্ষতা ধরে রাখতে একটি সত্যিকার দ্বন্দ্বের সম্মুখীন হতে হয়।

প্রবন্ধটিতে প্রথমেই ব্যবহূত গবেষণাপদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এরপর পশ্চিমা উন্নয়ন-সম্পর্কিত জ্ঞানভাষ্যে থিংক ট্যাংক এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সুশাসনবিষয়ক কার্যাবলির তাত্ত্বিক আলোচনা করা হয়েছে। অতঃপর বাংলাদেশে পৃষ্ঠপোষকতাচর্চার বিষয়টি উল্লেখ করার মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং সামাজিক কাঠামো তুলে ধরা হয়েছে। এই দুটি বিষয়কে একসঙ্গে করে এবং প্রাথমিক উপাত্তের ভিত্তিতে আমি দেখিয়েছি যে জ্ঞান উত্পাদন-প্রক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভূমিকা দুর্বল এবং জ্ঞানের শূন্যতা পূরণে থিংক ট্যাংকগুলোর সামর্থ্যও প্রশ্নসাপেক্ষ। বাহ্যিক তহবিলের ওপর নির্ভরশীলতা কীভাবে থিংক ট্যাংকগুলোর স্বায়ত্তশাসনকে প্রভাবিত করছে এবং গবেষণা প্রক্রিয়াকে অসম্পূর্ণ রাখছে তা আমি আলোচনা করেছি। এই প্রভাবশালী শক্তিগুলো প্রতিষ্ঠানগুলোর চরিত্র ঠিক করে দিচ্ছে এবং প্রতিষ্ঠানগুলো নীতিমালা তৈরির পরিবর্তে সেগুলো অনুসারে কাজ করছে। সবশেষ অংশে জ্ঞান, নীতি-প্রক্রিয়া (পলিসি প্রসেস) এবং শাসন-প্রক্রিয়ার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবন্ধকতা এবং ব্যক্তিগত সুযোগগুলোর প্রভাবকে পর্যালোচনা করা হয়েছে।

থিংক ট্যাংক এবং বিশ্ববিদ্যালয়: সমালোচনামূলক এবং সহায়ক

সুশাসনকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ এবং সক্রিয়ভাবে রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে থিংক ট্যাংক এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাত্ত্বিকভাবে কী ধরনের সমালোচনামূলক এবং সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে, তা এই অংশের আলোচ্য বিষয়।

শাসনপদ্ধতির একটি উপকরণ হিসেবে সিভিল সমাজ

১৯৯০-এর দশকের প্রথম দিকে পূর্ববর্তী বাজারভিত্তিক উদারবাদী দৃষ্টিভঙ্গি সংশোধনের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি উপায় হিসেবে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলো সুশাসনের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া শুরু করে। উন্নয়ন জ্ঞানভাষ্যে দাতা সংস্থা, বিশেষজ্ঞ এবং উন্নয়ন-সহযোগীদের মধ্যে একটি মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত হয়। তারা এটা মেনে নেয় যে উন্নয়নকাজ এবং নীতি আরও অধিক টেকসই এবং কার্যকর হওয়ার জন্য জাতীয় সরকারগুলোর সঙ্গে কাজ করা প্রয়োজন। জনপ্রশাসনের স্বচ্ছতা, মানবাধিকার বাস্তবায়ন এবং সরকারি খাতের সংস্কারের মতো সুনির্দিষ্ট শাসন-প্রক্রিয়াসংক্রান্ত শর্তে দাতারা উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোকে সহায়তা করা শুরু করে।

একদিকে দারিদ্র্য দূরীকরণ কৌশলপত্র (পিআরএসপি) ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) এবং অন্যদিকে সিভিল সমাজগুলোর জন্য বাহ্যিক সহায়তার মাধ্যমে মূলধারায় রূপান্তরিত হওয়া এসব উন্নয়ন জ্ঞানভাষ্য নীতি ও চর্চায় পরিণত হয়। পিআরএসপি এবং এসডিজি উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোতে মাল্টিসেক্টরাল ডাউনস্ট্রিম অ্যাপ্রোচের মাধ্যমে সহায়তার যে বহুধাবিভক্তি (fragment) এবং অদক্ষতা ঘটে, তা রোধের চেষ্টা করে। এই ক্ষেত্রে সামষ্টিক নীতি পর্যায়ের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ ঘটে, ফলে উন্নয়ন লক্ষ্যগুলোর মধ্যে ঐকতান তৈরি হয় এবং সেগুলো শক্তিশালী হয় (পারনিনি ২০০৯)। উন্নয়ন-সহযোগীরা দারিদ্র্য দূরীকরণের উপায় এবং লক্ষ্যগুলোর ওপর জোরারোপ করছে। এর দ্বারা এটা প্রতীয়মান হচ্ছে যে তারা সরকারগুলোকে দায়িত্বশীল এবং লক্ষ্য অর্জনের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ হতে সচেতন করতে সচেষ্ট। অধিকন্তু, সিভিল সমাজগুলোকে সহায়তা করার মাধ্যমে তা অদক্ষতা প্রতিরোধে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া তৈরি ও বজায় রাখতে সাহায্য করবে বলে মনে করা হয়। উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোতে গবেষণা সংস্থার (এনজিওর গবেষণা শাখা, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, থিংক ট্যাংক এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো) সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, এটা যুক্তি দেখানো হয়েছে যে জনসাধারণের কাছে সরকার এবং জনপ্রশাসনের স্বচ্ছতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা এসব প্রতিষ্ঠানের আছে।

সিভিল সমাজকে সহায়তা করার পশ্চিমা প্রচেষ্টাগুলোর ভিত্তি হচ্ছে সিভিল সমাজ সম্পর্কে তাদের একধরনের যান্ত্রিক ধারণায়ন (ইন্সট্রুমেন্টাল কনসেপচুয়ালাইজেশন)। এই ধারণা অনুসারে সিভিল সমাজ রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণমুক্ত এবং সেগুলো একটি নির্দিষ্ট নিয়মাত্মক (নরম্যাটিভ) এবং সদর্থক বিষয়কে সমর্থন করে (ব্লেয়ার ১৯৯৮)। ফলে যে জায়গাগুলোতে এটা দুর্বল বলে প্রতীয়মান হয়, সেখানে এটাকে শক্তিশালী করতে প্রচেষ্টা নেওয়া হয় (লুইস ২০০৪)। তবে এখানে দেখানো হয়েছে যে এই বৈশিষ্ট্যগুলো সিভিল সমাজ গঠনকারী এবং প্রতিযোগিতামূলক স্বার্থের প্রতিনিধিত্বকারী কর্মকদের (অ্যাক্টর) জটিল এবং বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি অনুধাবনে ব্যর্থ হয়েছে (ডিভাইন ২০০৩)। একই সঙ্গে, ঐতিহাসিক পরিবার, আত্মীয়তা এবং বিরোধপূর্ণ সম্পর্কের মাধ্যমে সিভিল সমাজ রাজনৈতিক কাঠামোর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, যা ব্যক্তিগত এবং তৃতীয় সেক্টরসহ সিভিল সমাজ, রাষ্ট্র ও বৃহত্তর সমাজের মধ্যকার সীমানাকে অস্পষ্ট করতে পারে (ক্যালডর ২০০৩)।

থিংক ট্যাংক এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিরপেক্ষতা

উত্তর আমেরিকায় ১৯৫০-এর দশকের মধ্যভাগে থিংক ট্যাংকের উদ্ভব হয়। সেখানে তখন থিংক ট্যাংক বলতে বোঝাত বেসরকারি, অলাভজনক গবেষণা সংস্থা; এই সংস্থাগুলো প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সরকার এবং সামাজিক স্বার্থ যেমন: ফার্ম, ইন্টারেস্ট গ্রুপ এবং রাজনৈতিক দলগুলো থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে স্বাধীনতা ভোগ করে (ম্যাকগ্যান এবং ওয়েভার ২০১১: ৪)। এই সংজ্ঞা সাধারণ অর্থে সিভিল সমাজ ধারণাটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। যদিও সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা থিংক ট্যাংকগুলোর একটি বৈশিষ্ট্য; তবে যে প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি উত্স থেকে তহবিল গ্রহণ করে, সেগুলোকে থিংক ট্যাংক হিসেবে গণ্য না করার কোনো কারণ নেই। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারি কাঠামো থেকে সেগুলোর স্বাধীনতার মাত্রা বিবেচনায় নেওয়া যায়।

থিংক ট্যাংকগুলোর কাজকে রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক উভয় ধরনের কার্যক্রম হিসেবে বিবেচনা করা যায়। কারণ তারা লোকনীতির গবেষণার সঙ্গে সম্পৃক্ত, যা নীতিগত বিতর্কগুলোতে আলোচনার বিষয় ও ধারণাগুলো সংগঠিত এবং রূপান্তরিত করে (অ্যাবেলসন ২০০৯:৪)। নীতি প্রণয়নে একটি সমালোচনাত্মক কণ্ঠস্বর হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করার কারণে থিংক ট্যাংকগুলো সুশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোতে নীতি প্রণয়নে থিংক ট্যাংক এবং বিশিষ্ট এনজিওগুলোকে সম্পৃক্ত করার ফলে সরকারের প্রমাণভিত্তিক নীতি সিদ্ধান্ত প্রণয়নের পদ্ধতিই পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। পূর্বে প্রধান রাজনৈতিক কর্মকেরা থিংক ট্যাংক এবং এনজিওগুলোকে এ ধরনের কাজে সম্পৃক্ত হতে দিত না (হার্স, মাসিয়া এবং শ্রুম ২০১০)। কয়েকজন লেখকের মতে, এ ধরনের মিথস্ক্রিয়া এবং সম্পৃক্ততার কারণে শাসনপদ্ধতি আরও অধিক জবাবদিহিমূলক এবং গণতান্ত্রিক হয়েছে। এই ক্ষেত্রে থিংক ট্যাংকগুলোকে নাগরিকদের স্বার্থের প্রতিনিধিত্বকারী এবং স্বচ্ছতা প্রচলনকারী হিসেবে দেখা হয় (পজ ২০১১)। সিভিল সমাজের লক্ষ্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ২০০০-এর দশকের প্রথম দিকে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলো (বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা এবং জাতিসংঘ) উন্নয়নশীল দেশগুলোতে থিংক ট্যাংকগুলোর উন্নয়নে সহায়তা করা শুরু করে। যথাযথ নিরপেক্ষ কাজ সম্পাদনের সামর্থ্যের ওপর থিংক ট্যাংকগুলোর কার্যকারিতা নির্ভর করে, এটা ব্যতিরেকে জনবিতর্ক (পাবলিক ডিবেট) এবং অধিপরামর্শের (অ্যাডভোকেসি) সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা খাটো করে দেখা যেতে পারে।

গবেষণার সঙ্গে নীতির সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভূমিকা নিয়ে খুব একটা বেশি গবেষণা হয়নি। এর একটি কারণ এটি হতে পারে যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রায়ই প্রতিযোগিতাপূর্ণ সিভিল সমাজের কর্মক্ষেত্রের বাইরে অবস্থিত নিরপেক্ষ কর্মক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। রচনাবলি এবং সমাজে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে জ্ঞান প্রস্তুতকারক এবং রক্ষক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর লক্ষ্য ধরে নেওয়া হয় দক্ষতা, সাংস্কৃতিক এবং বিজ্ঞানসংক্রান্ত জ্ঞান, সমালোচনাত্মক অনুসন্ধানের জন্য প্রয়োজনীয় নমনীয়তা ও সামর্থ্য এবং সমাজে নিজেদের অবদান রাখার জন্য প্রয়োজনীয় নৈতিক প্রজ্ঞাসহ নতুন প্রজন্ম তৈরি করা (বির্গেনিউ ২০০৫: ১০)। বার্তুসি, বোর্গেস-হারেরো এবং ফুয়েন্তেস-জুলিওর (২০১৪) মতে, কার্যকর মিথস্ত্রিয়া এবং জ্ঞানগর্ভ কাজের মাধ্যমে লাতিন আমেরিকা এবং উত্তর আমেরিকায় আন্ত-আমেরিকান নীতিপ্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৮০-এর দশকে দাতারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সহায়তা করা শুরু করে। মান নিয়ন্ত্রণ এবং স্বায়ত্তশাসনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অবদান রাখে বলে দাতাদের ধারণা ছিল (পিটারস ২০০৩), যা একটি দেশে জ্ঞান উত্পাদনকে শক্তিশালী করতে পারে এবং যা ব্যতিরেকে প্রমাণনির্ভর নীতিসমূহ কার্যকর হতে পারে না। 

পৃষ্ঠপোষকতা: অনুপ্রবেশপ্রবণ রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহাসিক সামাজিক কাঠামো

জ্ঞান কীভাবে তৈরি হচ্ছে এবং এই ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো কী ধরনের ভূমিকা পালন করছে তা অনুধাবন করতে হলে দেশের রাজনৈতিক কাঠামো এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে ভালোভাবে জানাশোনা থাকা প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এই পরিস্থিতিতে প্রতিবন্ধকতাগুলো কীভাবে মোকাবিলা করে এবং সুযোগগুলো কাজে লাগায় তাও অনুধাবন করা জরুরি। এই অংশে বাংলাদেশে রাষ্ট্র এবং সিভিল সমাজের প্রতিষ্ঠানগুলোর রাজনৈতিক সংস্কৃতি সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত ঐতিহাসিক পর্যবেক্ষণ হাজির করা হয়েছে।

রাজনৈতিকায়িত (পলিটিসাইজড) জনপ্রশাসন

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জন করার পর থেকে বাংলাদেশের জনপ্রশাসন এবং রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো রূপান্তরের মধ্য দিয়ে গিয়েছে। একের পর এক অভ্যুত্থান, সহিংস রাজনৈতিক পরিবর্তন ও দ্বন্দ্ব এবং সামরিক হস্তক্ষেপ সরকারের ক্ষমতা প্রয়োগের প্রক্রিয়া এবং বৈধতাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে (হক ২০১১: ৬৩)। ব্রিটিশ এবং পশ্চিম পাকিস্তান আমল থেকেই জনপ্রশাসন এবং আমলাতন্ত্র উচ্চমাত্রার রাজনৈতিকায়নের শিকার হয়েছে। এর ফলে জনপ্রশাসনব্যবস্থার স্বচ্ছতা হুমকির সম্মুখীন হয়েছে (হক এবং রহমান ২০০৩)।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুর্ভিক্ষ এবং অর্থনৈতিক অচলাবস্থার সময় দুর্নীতি, স্বচ্ছতার অভাব, অভিজাততন্ত্র, রাজনৈতিক স্বজনপ্রীতি, দলবাজি, পৃষ্ঠপোষক-মক্কেল সম্পর্কের ফলে একটি অকার্যকর আমলাতন্ত্র তৈরি হয়েছে। ফলে যুদ্ধের পর ঘুরে দাঁড়ানোর গতি শ্লথ হয়ে পড়ে (শ্রীবাস্তব ২০১১)। অনেক বছর ধরে প্রভাবশালী ক্ষেত্রগুলোতে নিয়োগ পাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের প্রতি আনুগত্য। ফলে দ্রুত পদোন্নতি এবং অন্য আমলাদের কাছ থেকে সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে কর্মদক্ষতা, অভিজ্ঞতা বা মেধার চেয়ে আনুগত্যকেই বড় করে দেখা হয় (জাফরুল্লাহ এবং রহমান ২০০৮)। এর ফলে অধিকাংশ জনপ্রশাসন এবং মন্ত্রিসভায় এ ধরনের পৃষ্ঠপোষকতার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। যার ফলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং বিচারালয়সহ রাষ্ট্রকাঠামো...শাসক দলের রাজনৈতিকায়িত উপকরণে রূপান্তরিত হয়েছে (সরকার ২০০৮, ১৪২)। বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যক্তিগত স্বার্থোদ্ধারে ব্যস্ত স্বার্থপর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখনো অস্বচ্ছ জনপ্রশাসনকে প্রভাবিত করছে (হক এবং রহমান ২০০৩)।

পৃষ্ঠপোষকতার সংস্কৃতির ফলে জনপ্রশাসনে অভিজাততন্ত্র দৃঢ়মূল হচ্ছে। সরকারি চাকরিজীবীদের একটি ক্ষুদ্র এবং স্বতন্ত্র গোষ্ঠী রাজনৈতিক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ফায়দা লুটছে। অভিজাত সদস্যরা এই গোষ্ঠীতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুবিধাগুলো সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, ফলে তারা এই গোষ্ঠীর ক্ষমতা এবং মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখার মনোভাব পোষণ করেন। জাফরুল্লাহর মতে, বাংলাদেশে এই কাজ হয় ক্ষমতার অপব্যবহার, পরশ্রীকাতরতা, ঘুষ প্রদান এবং অবৈধ কাজের মাধ্যমে (২০০৭, ১৬৯) এবং এর ফলে অনানুষ্ঠানিক এবং মক্কেলধর্মী (ক্লায়েন্টেলিস্টিক) শাসনপদ্ধতির সুযোগ তৈরি হয়। এই অবস্থায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, যেখানে রাষ্ট্রীয় কর্মকেরা সমাজের কিছু ব্যক্তিকে এমনভাবে সহায়তা প্রদান করেন, যার ফলে তারা তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ (প্রায়ই রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক) উদ্ধার করতে পারে। এ ধরনের অনানুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া সরকারি দপ্তরের অপব্যবহার করে ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধার অর্থাত্ দুর্নীতির পথ প্রশস্ত করতে পারে (হক ২০১১: ৫১-৫৪)। এতে করে প্রশাসনের কর্মদক্ষতা, শাসনকাঠামোর স্বচ্ছতা এবং জনসম্পদ (পাবলিক রিসোর্স) বণ্টন বাধাগ্রস্ত হয়।

পৃষ্ঠপোষকতা এবং সিভিল সমাজ

রাষ্ট্র ও সিভিল সমাজ কর্মকদের মধ্যে ব্যাপক মাত্রার পৃষ্ঠপোষকতা বিদ্যমান। কয়েকজন লেখকের মতে, এটি নীতি তৈরির প্রক্রিয়ার ভিত্তিমূল (পারনিনি ২০০৬: ১৯০-১৯১)। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের কাঠামো অনেক দিন ধরে তৈরি হওয়া পৃষ্ঠপোষক-মক্কেল সম্পর্কের জটিলভাবে বিস্তৃত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত, যা রাষ্ট্রীয় কাঠামোর বাইরেও বিস্তৃত (কোচানেক ২০০০: ৫৪৯)। কয়েকটি গবেষণা অনুসারে সরকারি আমলাতন্ত্রের নিষ্ক্রিয়তা, বিচ্ছিন্নতাবোধ, একগুঁয়েমি ও রাজনৈতিকায়ন রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রবহির্ভূত কর্মকদের মধ্যে একটি অধিকতর ভালো মিথস্ক্রিয়া তৈরির পথে অন্যতম প্রধান বাধা। একই সঙ্গে এগুলো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারকে ভিন্নপথে পরিচালনা করার দায়েও দায়ী (জাফরুল্লাহ এবং রহমান ২০০৮)।

বাংলাদেশের সক্রিয় সিভিল সমাজগুলোর মধ্যে রয়েছে এনজিও, স্থানীয় গোষ্ঠী, সমবায় সমিতি, পেশাজীবী সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়ন, থিংক ট্যাংক এবং গণমাধ্যম। ১৯৭১ সালের পর এনজিওগুলো পুনর্বাসনকাজে ব্যাপক মাত্রায় সম্পৃক্ত হয় এবং এই ধারা ১৯৭০ এবং ১৯৮০-এর দশকে চলতে থাকে। ১৯৯০-এর দশক থেকে দারিদ্র্য হ্রাস এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগগুলোতে এনজিওগুলো কেন্দ্রীয় চরিত্রে অবতীর্ণ হয়। যেসব সিভিল সমাজ প্রতিষ্ঠান সুশাসন প্রতিষ্ঠার কার্যক্রমে মূল ভূমিকায় ছিল, সেগুলো এখন প্রায়ই প্রভাবশালী রাজনৈতিকায়ন এবং পৃষ্ঠপোষণ সংস্কৃতি থেকে নিজেদের মুক্ত বলে দাবি করতে পারে না (ব্লেয়ার ২০০১: ১৮৫; ডিভাইন ২০০৬)। সরকারি প্রশাসনের উপেক্ষা এবং নিজেদের স্বার্থ ও মূল্যবোধ রক্ষার প্রণোদনার পাল্লায় পড়ে সিভিল সমাজের প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাধীন থাকার প্রচেষ্টা হিসেবে বছরের পর বছর ধরে দাতাদের দিকে (এবং দাতারা প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে) ঝুঁকে পড়ছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক এবং পৃষ্ঠপোষকতার রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয় এবং থিংক ট্যাংকগুলোর স্থান কোথায়?

জ্ঞান সমাজে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো: নিষ্ক্রিয় দশা

অধিকাংশ উত্তরদাতাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বুদ্ধিবৃত্তিক গুরুত্বের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন, তবে তাদের মতে জ্ঞান তৈরির ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিষ্ক্রিয়। এই অবস্থার কারণ কী, তা এই অংশে আলোচনা করা হবে। কাঠামো এবং প্রণোদনা কীভাবে জ্ঞান সমাজে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সম্পৃক্ততাকে বাধাগ্রস্ত করে, সেই সম্পর্কিত প্রাথমিক তথ্য এখানে তুলে ধরা হবে। জ্ঞান সমাজ বলতে এমন একটি পরিমণ্ডলকে বোঝানো হয়, যেখানে আত্মনির্ভরশীল প্রতিষ্ঠানসমূহ স্বাধীনভাবে এবং নিজস্ব বুদ্ধিবৃত্তিক স্বার্থের ভিত্তিতে তাদের নিজেদের জন্য গবেষণার বিষয় নির্ধারণ করে এবং সে অনুযায়ী গবেষণা করে। প্রাপ্ত তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে যে উচ্চ মানসম্পন্ন শিক্ষক-শিক্ষিকা থাকা সত্ত্বেও সুপ্রতিষ্ঠিত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অত্যধিক মাত্রায় রাজনৈতিকায়নের শিকার হওয়ায় এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাণিজ্যিক চাপ থাকায়, জ্ঞান উত্পাদনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবদান বেশ দুর্বল।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রাজনৈতিক আনুগত্য এবং শত্রুতা

১৯২১ সালে দেশে প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়। এরপর ১৯৫৩ সালে স্থাপিত হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত দেশে ছয়টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল।১ ১৯৯২ সালে পাস হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন। বর্তমানে দেশে ৩৪টি সরকারি এবং ৭৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে (ইউজিসি ২০১৩)। উদীয়মান মধ্যবিত্ত শ্রেণির শিক্ষার চাহিদা পূরণের নিমিত্তে বহুসংখ্যক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে জ্ঞান উত্পাদনের চাপ এবং চ্যালেঞ্জগুলো বিবেচনা করলে দেখা যাবে, সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে।

বাংলাদেশে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারের মধ্যে খুব দৃঢ় সম্পর্ক বিদ্যমান। তবে এই সম্পর্ক জ্ঞান তৈরি বা সরকারি নীতিনির্ধারণে দিকনির্দেশক ধরনের নয়, বরং তা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ততা সম্পর্কিত। বাংলাদেশে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সর্বোত্কৃষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেদের পরিচিতির সঙ্গে সঙ্গে ভয়ংকরভাবে রাজনৈতিকায়িত প্রতিষ্ঠান হিসেবেও খ্যাত। অল্প কয়েকটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত; এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (একসময় যা প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসেবে পরিচিত ছিল)। রাজনৈতিকায়নের মাত্রা এতটাই জটিল যে তা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অভ্যন্তরীণ কর্মকাণ্ড এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিদ্যায়তনিক স্বাধীনতাকে অতীব মাত্রায় প্রভাবিত করে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকাণ্ডে দলীয় রাজনীতির প্রভাব একেক ক্যাম্পাসে একেক ধরনের। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতার গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি। সাধারণত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা সরাসরি বা  পরোক্ষভাবে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে (এবং প্রায়ই ওই রাজনৈতিক দলের একটি নির্দিষ্ট কাজের সঙ্গে) সম্পৃক্ত থাকেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ সুপরিচিত রাজনৈতিক কর্মী। এর একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হচ্ছে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনগুলোর সময় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা। শিক্ষকেরা নির্দিষ্ট রঙের প্যানেলের হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন, যা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার প্রতীক (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে নীল, সাদা এবং গোলাপি প্যানেল যথাক্রমে আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং বামপন্থী দলগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ততা প্রকাশ করে)। জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলোর ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে সম্পৃক্ত থাকলে শিক্ষার্থীরা সুযোগসুবিধা পায়। সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে আওয়ামী লীগের যুব এবং ছাত্রলীগ, বিএনপির জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এবং জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির। রাজনৈতিক দলগুলোতে ছাত্রসংগঠনগুলো ভবিষ্যত্ রাজনৈতিক নেতৃত্ব তৈরির প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিবেচিত হওয়ার কথা, যেখানে শিক্ষার্থীরা রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে কাজ করে এবং এদের অনেকেই তাদের পছন্দের রাজনৈতিক দলের মধ্যে নিজেদের ক্যারিয়ার গড়ে। আমাদের উত্তরদাতাদের মতে, ছাত্রসংগঠনগুলো কর্মী সংগ্রহের সংঘাতময় পন্থা এবং সহিংসতার জন্য কুখ্যাত। উত্তরদাতাদের মতে, রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিদ্যায়তনিক গবেষণা বা শিক্ষার্থীদের স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করার প্রতি খুব অল্প আগ্রহই আছে। সংগঠনগুলো নেহাত জাতীয় সংঘাতময় রাজনীতির বর্ধিতাংশ হিসেবে কাজ করে।

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশ দক্ষ শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন। তবে ওপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া রাজনৈতিক আনুগত্য এমন একটা প্রণোদনাকাঠামো তৈরি করেছে, যা তাদের মৌলিক গবেষণার প্রতি মনোনিবেশ করতে উত্সাহিত করে না। ওপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া ব্যবস্থাপনা কাঠামোর ফলে ক্ষমতাসীন দল ব্যতীত অন্যান্য দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বৈষম্যের শিকার হতে হয়। এতে করে রাজনৈতিক আনুগত্যের একটি আধিপত্যবাদী এবং অনুপ্রবেশপ্রবণ সংস্কৃতি বলবত্ হয়, যা বিদ্যায়তনিক স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করে। একজন উত্তরদাতার মতে, এই রাজনৈতিক আনুগত্য এবং শত্রুতার সংস্কৃতির ফলে পক্ষপাতমূলক নিয়োগের মাধ্যমে বিদ্যায়তনিক মধ্যমানতা (mediocrity), ব্যক্তিগত রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার ভিত্তিতে অবাধে পদোন্নতি এবং পদায়নের চর্চা হচ্ছে। এই ক্ষেত্রে মেধা ও বিদ্যায়তনিক ফলাফল বিবেচিত হয় না। অন্যদের মতে, রাজনৈতিক আনুগত্যের এই বদ্ধ গণ্ডির বাইরের শিক্ষক-শিক্ষিকারা অতিরিক্ত শিক্ষাসম্পর্কিত এবং প্রশাসনিক কাজের চাপ, সহকর্মীদের কাছ থেকে অসহযোগিতা এবং তাদের ওপর বিশ্বাসের অভাবের শিকার হয়। ক্ষেত্রবিশেষে তাদের ছোট অফিস, অল্প শিক্ষা উপকরণ এবং এমনকি অল্প স্টেশনারি দেওয়া হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর এ ধরনের অনধিকারচর্চার ফলে একদিকে গবেষণা এবং মৌলিক লেখা প্রকাশে শিক্ষক-শিক্ষিকারা উত্সাহিত হচ্ছে না; অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানগুলোতে এ ধরনের কাজের অবমূল্যায়নও হচ্ছে। ফলে জ্ঞান তৈরি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।  

মুরগি আগে, না ডিম আগে

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন এবং গবেষণা দক্ষতার স্বল্পতাকে (যদিও এর উল্লেখযোগ্য ব্যত্যয়ও আছে) রাজনৈতিকায়নের কারণ বা ফলাফল হিসেবে দেখা যেতে পারে। গবেষণার জন্য বরাদ্দকৃত আর্থিক সম্পদের স্বল্পতার কারণে জ্ঞানের মান প্রশ্নের সম্মুখীন হয়। একজন উত্তরদাতা এই পরিস্থিতিকে ‘মুরগি আগে, না ডিম আগে’ পরিস্থিতি হিসেবে বর্ণনা করেছেন। কারণ গবেষণাকাজে যথাযথভাবে অর্থায়ন করার মতো তহবিল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নেই। অন্যদিকে, গবেষকেরা গবেষণা তহবিল পান না, কারণ ভালো মানের গবেষণা প্রস্তাব তৈরি এবং গবেষণা অনুদান পাওয়ার জন্য যে দক্ষতাগুলো প্রয়োজন, তারা সেই দক্ষতাগুলোতে দুর্বল। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন তুলনামূলকভাবে কম (যদিও অভিজ্ঞতা এবং মর্যাদার ভিত্তিতে বেতনের পরিমাণ লক্ষণীয়ভাবে পরিবর্তিত হয়) এবং শিক্ষা কার্যক্রম ছাড়া গবেষণার জন্য তারা খুব অল্প সময়ই পান। ফলে যাদের জ্ঞান উত্পাদনের দিকে ঝোঁক থাকে তারা প্রায়ই বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ছেড়ে দেন, কারণ সেখানে তারা পদোন্নতি বা বুদ্ধিবৃত্তিক উদ্দীপনার কোনো আশা দেখেন না। এর পরিবর্তে তারা বেসরকারি খাত, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বা উন্নয়ন খাতে যোগদান করেন, যেখানকার কাঠামো তুলনামূলকভাবে অধিক মেধাভিত্তিক।

অধিকাংশ উত্তরদাতার মতে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ওপরে উল্লেখিত বৈশিষ্ট্যগুলো তুলনামূলকভাবে কম উপস্থিত, কারণ শিক্ষকদের তুলনামূলকভাবে বেশি বেতন দেওয়া হয় (অংশত উচ্চ টিউশন ফির কারণে)। একই সঙ্গে, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নজরদারি ব্যবস্থা তুলনামূলকভাবে কঠোর, কারণ শেষোক্ত ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক বিষয়গুলোর ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়। উত্তরদাতাদের মতে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাণিজ্যিক নীতিগুলো কঠোরভাবে অনুসরণ করে এবং তারা প্রাইভেট করপোরেশনগুলোর মতো বাজারভিত্তিক সম্প্রসারণ কৌশল অনুসরণ করে। উত্তরদাতাদের মতে, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তুলনায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দলীয় রাজনীতির প্রভাব থেকে মুক্ত। কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়ের জন্যই ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করেছে।

এমনটা নয় যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কোনো জ্ঞানই উত্পাদন করে না। ওপরের বিষয়গুলো প্রতিষ্ঠান হিসেবে জ্ঞান উত্পাদনের ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দৃশ্যমান গবেষণার পরিমাণ কেন কম, তা তুলে ধরছে। বিশ্বব্যাপী জ্ঞান সমাজে আন্তর্জাতিক জার্নালগুলোতে প্রকাশিত বিদ্যায়তনিক প্রকাশনাগুলোর মাধ্যমে গবেষণা ফলাফলের মান প্রতিফলিত হয়। অধিকাংশ শিক্ষকই বাংলাদেশি জাতীয় বিদ্যায়তনিক জার্নালগুলোতে নিজেদের প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। অধিকাংশ শিক্ষকই তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ জার্নালে নিজেদের কাজ প্রকাশ করতে চান। আন্তর্জাতিক প্রি-রিভিউড জার্নালগুলোর তুলনায় এই জাতীয় জার্নালগুলোর মান বেশ খারাপ এবং এগুলোতে পর্যালোচনার ব্যবস্থাও বেশ দ্রুত। অনেক উত্তরদাতার মতে, জ্ঞান উত্পাদনের মান এবং এই প্রক্রিয়া চলমান রাখার জন্য যে ব্যবস্থা প্রয়োজন তা হয় অনুপস্থিত বা অপর্যাপ্ত (যদিও হাতে গোনা কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে)।

প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে, যা প্রাইভেট চুক্তি এবং পরামর্শক হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে তারা পুষিয়ে নেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক অনেক উত্তরদাতা সতর্ক করে বলেছেন যে প্রাইভেট কর্মকদের দেওয়া নিয়মিত পরামর্শ চুক্তির কারণে জ্ঞান উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো পরামর্শক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়ার দশা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রাইভেট কর্মকদের নানা ধরনের সেবা প্রদান করে থাকে, যেমন ব্যাংকগুলোকে তারা নিয়োগ-প্রক্রিয়া, পরীক্ষা নেওয়া এবং প্রশিক্ষণ প্রদানে সহায়তা করে। দাতা সংস্থাগুলো পূর্বনির্ধারিত বিষয়ে স্বল্পমেয়াদি গবেষণাকাজের জন্য অল্প কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় বা বিভাগের সঙ্গে চুক্তিও করে। উত্তরদাতারা ব্যবহারিক বিষয়গুলোর সঙ্গে সম্পর্ক রাখার গুরুত্বের বিষয়টি স্বীকার করার সঙ্গে সঙ্গে পরামর্শক হিসেবে কাজ করার বিপদসমূহও তুলে ধরেছেন। একজন উত্তরদাতার মতে, এর মাধ্যমে আর্থিক সম্পদ আহরণ করা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অগ্রাধিকারে পরিণত হচ্ছে, যা বিপজ্জনক হতে পারে। এই বিষয়গুলোর প্রতি দৃষ্টি না দিলে বা এগুলোকে যথাযথ নিয়মাবলির মধ্যে না নিয়ে এলে, তা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন শিক্ষকদের বিপদের সম্মুখীন করতে পারে।

থিংক ট্যাংক, আসলেই কী?

এই অংশে যুক্তি দেওয়া হয়েছে যে অল্প কয়েকটি থিংক ট্যাংকই সক্রিয়ভাবে এবং স্বাধীনভাবে জ্ঞান সমাজে অবদান রাখছে। প্রতিষ্ঠান হিসেবে তারা যদি স্বায়ত্তশাসন বজায় রাখতে চায়, তবে হয় তাদের রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে হবে এবং তথ্যবাণিজ্য বাজারে পরামর্শক ধরনের সত্তায় পরিণত হতে হবে (এতে করে তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা হুমকির সম্মুখীন হবে), রাষ্ট্রীয় কর্মকদের সঙ্গে ব্যক্তিগত এবং অনানুষ্ঠানিক সম্পর্কের ওপর নির্ভর করতে হবে (এতে করে নিজেরাই রাজনীতির উপকরণে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়) বা দাতাদের তহবিলের ওপর নির্ভর করতে হবে (এতে তাদের স্বায়ত্তশাসন দুর্বল হয়ে পড়ে)।

থিংক ট্যাংকগুলো কি চিন্তা করে?

অনেক উত্তরদাতা থিংক ট্যাংকগুলোর আলোচ্যসূচি এবং গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরেছেন। এর মূল কারণ হচ্ছে বাহ্যিক তহবিলের ওপর নির্ভরশীলতা, যা তাদের সমালোচনামূলকভাবে চিন্তা ও জ্ঞান উত্পাদনের সামর্থ্যকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

প্রথমত, একটি থিংক ট্যাংক কী বা কী ধরনের হওয়া উচিত তা নির্ধারণ করা বাংলাদেশে কঠিন। অনেক উত্তরদাতার কাছেই তা বেশ জটিল একটি বিষয়। প্রতিষ্ঠাতার ওপর ভিত্তি করে থিংক ট্যাংকগুলোর উদ্দেশ্যও ভিন্ন ভিন্ন। প্রায়ই তাদের ভূমিকা বহুমুখী এবং খাতভেদে তাদের কাজের মানও পরিবর্তিত হয়। ব্যবহারিক অর্থে থিংক ট্যাংক শব্দবন্ধ দ্বারা নানা ধরনের প্রতিষ্ঠানকে বোঝায়। কিছু কিছু থিংক ট্যাংক অধিপরামর্শভিত্তিক প্রতিষ্ঠান, তারা তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ প্রতীয়মান এমন একটি বিষয়কে জনসাধারণের দৃষ্টিগোচর করে। অন্য কিছু প্রতিষ্ঠান তথ্য সংগ্রহ এবং এর ভিত্তিতে নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সহায়তা করে। পরবর্তী অংশে থিংক ট্যাংকগুলো সাধারণত যে ধরনের কাজ করে, সেগুলোর ভিত্তিতে আলোচনা করা হলো।

সাধারণত থিংক ট্যাংকগুলো আর্থিক বিষয় নিয়ে বড় ধরনের দোদুল্যমানতার সম্মুখীন হয়। এর ফলে তাদের নিজেদের গবেষণার বিষয় এবং সামর্থ্যের মধ্যে আপস করতে হয়। সিভিল সমাজে সক্রিয় এনজিওগুলোর মতোই থিংক ট্যাংকগুলো সাধারণত বিদেশী তহবিলের ওপর নির্ভরশীল এবং এর ফলে তারাও ‘টাকার জন্য মূল্য’ (value for money) বাধ্যবাধকতার শিকার। এশিয়াতে থিংক ট্যাংকের জন্ম তুলনামূলকভাবে একটি সাম্প্রতিক ঘটনা হলেও, শুধু পাঁচটি দেশেই বাংলাদেশের চেয়ে বেশি সংখ্যক থিংক ট্যাংক আছে (রশিদ ২০১৩)।২ তবে এটা বলা যায় যে এনজিওগুলোর মতো থিংক ট্যাংকগুলোও নিজেদের আর্থিক টেকসই অবস্থা এবং নিজেদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ও প্রাসঙ্গিকতার মধ্যে একটি বিরোধাভাসের মুখোমুখি হয় (ডিভাইন ২০০৩)। এখানে উল্লেখ্য, তহবিলের প্রাপ্যতা সব সময় বড় বাধা না, মূল বিবেচনার বিষয় হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বায়ত্তশাসনের ওপর তহবিলের অভিগমনের (access) প্রভাব। অধিকাংশ বেসরকারি স্বাধীন থিংক ট্যাংকগুলো অনুমোদিত গবেষণাকাজের মাধ্যমে (বাংলাদেশ সরকার, বিদেশী দাতা, দ্বিপক্ষীয় সংস্থা বা বৃহত্ এনজিওগুলোর জন্য) নিজেদের তহবিল সংস্থান করে। ফলে তাদের বাহ্যিক স্টেকহোল্ডারদের গবেষণা প্রাধান্য মেনে চলতে হয় এবং এর ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণও সীমিত। টিকে থাকার জন্য দাতাদের দেওয়া তহবিলে স্বল্পমেয়াদি সুনির্দিষ্ট গবেষণা প্রকল্পের ওপর নির্ভরশীলতার কারণে তাদের নির্দিষ্ট বিষয়ে গবেষণা পরিচালনা এবং গবেষণা ফলাফলের বাস্তবায়ন ও বিশ্লেষণ করার সামর্থ্য হ্রাস পায়।

উন্নয়ন-সহযোগীরা কেন থিংক ট্যাংকগুলোর সঙ্গে এবং ক্ষেত্রবিশেষে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে চুক্তি করে, তার তিনটি প্রধান কারণ রয়েছে। প্রথমত, থিংক ট্যাংকগুলো অনুদান ও চুক্তির জন্য প্রস্তাব পেশ করার সামর্থ্য অর্জন করেছে। একই সঙ্গে গবেষক এবং প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞদের তারা একত্র করতে পারে। দ্বিতীয়ত, থিংক ট্যাংক এবং দাতা সংস্থাগুলোর সম্পর্ক দৃঢ় এবং প্রায়ই ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যা করতে পারেনি। তৃতীয়ত, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখা হয়ে থাকতে পারে। উত্তরদাতারা স্বীকার করেছেন যে এর ফলে থিংক ট্যাংকগুলো প্রকল্পপ্রাপ্তি এবং গবেষণা করা নিশ্চিত করতে পারে। এ ক্ষেত্রে গবেষণার বিষয় নির্ধারণে স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করতে না পারলে, তারা পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মতো কোনো স্পষ্ট কারণ ছাড়াই এক গবেষণা প্রকল্প থেকে অন্য গবেষণা প্রকল্পে কাজ করা শুরু করার ঝুঁকি নেয়। লাতিন আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চাহিদাভিত্তিক গবেষণা তহবিলের প্রভাব বিশ্লেষণ করে অ্যারোসিনা এবং সুটজ (২০০১) এই পরিস্থিতিকে প্রকল্প উন্মুখতা (call for projects) হিসেবে নামকরণ করেছেন। এই পরিস্থিতিতে প্রস্তাবনা আহ্বান, গবেষণা অনুদানের আবেদন তৈরি, উপস্থাপন এবং ফলাফল সরবরাহকে অগ্রাধিকার দেয়।

প্রায়ই অংশগ্রহণমূলক দাবি করা হলেও, যেসব জ্ঞান উত্পাদন এবং গবেষণার বিষয় নির্ধারণ করা হয়, সেগুলো উন্নয়ন সংস্থাগুলোর বিষয়সূচি (জলবায়ু পরিবর্তন, নারী অধিকার, ক্ষুদ্রঋণ, দারিদ্র্য ইত্যাদি প্রাথমিক উদাহরণ) দ্বারা অধিক মাত্রায় প্রভাবিত। এই প্রক্রিয়ায় থিংক ট্যাংকগুলো যে ফলাফল উত্পাদন করে সে ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে তথ্যের গৌণ বিশ্লেষণের প্রয়োজন হয়, ফলে প্রস্তাবনামূলক জ্ঞান তৈরি হয় (আন্তর্জাতিক দাতা, উন্নয়ন সংস্থা বা সরকারের মন্ত্রণালয়গুলোর জন্য প্রকল্পের ফলাফল মূল্যায়ন, নীতির প্রভাব নিরীক্ষা এবং কর্মসূচি-সংশ্লিষ্ট গবেষণা)। উপাত্ত, তথ্য এবং জ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করা জরুরি, কারণ জ্ঞান উত্পাদন একটি সৃজনশীল, বুদ্ধিবৃত্তিক, দীর্ঘমেয়াদি শ্রমনির্ভর প্রক্রিয়া, যার সঙ্গে বহুমাত্রিক বিষয় সংশ্লিষ্ট।

কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও এ ধরনের কাজ মূলত উপকরণমূলক। সাক্ষাত্কার দেওয়া একজন প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদের মতে, ১৯৬০-এর দশক থেকেই তাত্ত্বিক চিন্তাভাবনার ঘাটতি ছিল। এই সময় থেকেই জ্ঞান উত্পাদন একদিকে আন্তর্জাতিক দাতাদের প্রয়োজন মেটানো এবং অন্যদিকে আর্থিক প্রয়োজন মেটানোর দিকে ঝুঁকে পড়ে। তখন থেকেই জ্ঞান উত্পাদন পিছিয়ে পড়ছে বলে তাঁর ধারণা। জাতীয় স্বার্থের চেয়ে পৃষ্ঠপোষকদের উদ্দেশ্য ভিন্ন হতে পারে। পৃষ্ঠপোষকদের উদ্দেশ্য হতে পারে জলবায়ু পরিবর্তন এবং দারিদ্র্যের প্রভাব যাচাই করা, কিন্তু এই বিষয়গুলো সম্পর্কে গবেষণা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ নাও হতে পারে। এখানে দাতাদের স্বার্থই অধিক প্রাধান্য পায় এবং এর জন্যই থিংক ট্যাংকগুলোর সঙ্গে চুক্তি করা হয়। আন্তর্জাতিক দাতারা কঠোর সময়কাঠামো এবং অর্থ বরাদ্দ নিয়ে প্রকল্প পরিকল্পনা করে, যার ফলে থিংক ট্যাংকগুলো নিজেদের অভ্যন্তরীণ সামর্থ্য বৃদ্ধি করতে পারে না। থিংক ট্যাংকগুলো খণ্ডকালীন বা অনিয়মিত গবেষকদের নিয়ে কাজ করে এবং এদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়। যারা উপাত্ত সংগ্রহ এবং ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে গবেষণা ফলাফল তৈরি করে। সম্পদের এই পরিব্যাপ্ত অবস্থার কারণে অনেক থিংক ট্যাংকের পরিচয় অস্পষ্ট থেকে যায়। ফলে অধিকাংশ থিংক ট্যাংকের প্রকাশনার মান খুব খারাপ বা নিম্নমানের। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা সংস্থা এই ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের পদোন্নতির জন্য বিদ্যায়তনিক প্রকাশনার সংখ্যা ও মানের কঠোর নীতিমালা অনুসরণ করা হয়। এই ব্যবস্থার কারণে কর্মীরা মৌলিক গবেষণা করতে এবং উত্কৃষ্ট মানের গবেষণা ফলাফল তৈরিতে উত্সাহিত হয়।

থিংক ট্যাংকগুলো কি ট্যাংক (গোষ্ঠী)?

পূর্ববর্তী অংশে আমি থিংক ট্যাংকগুলোর চিন্তা করার সামর্থ্য আলোচনা করেছি। এই অংশে আমি দেখাব যে থিংক ট্যাংকগুলো স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠান নয়, অর্থাত্ তারা ট্যাংকস (গোষ্ঠী) নয়। এর কারণ দুটি। প্রথম কারণটি তাদের ব্যাপ্তিযোগ্যতা (permeability) এবং দ্বিতীয় কারণটি তাদের ব্যক্তিত্বারোপের (personification) সঙ্গে সম্পর্কিত।

লাতিন আমেরিকায় অ্যারোসিনা এবং সুটজের গবেষণা অনুসরণ করে বলা যায়, থিংক ট্যাংকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে কাজ করার ইচ্ছা থেকে লাভবান হয়। এই শিক্ষকেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঁধাধরা কাঠামোকে দুটি কারণে পাশ কাটাতে চান। এদের কেউ কেউ তাদের নিজেদের স্বতন্ত্র থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠা করতে চান এবং অন্যরা তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে একাধিক চুক্তি করতে এবং বিভিন্ন পদে কাজ করতে চান। যে থিংক ট্যাংকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে অবস্থিত এবং যাদের স্থায়ী এবং নির্ভরযোগ্য তহবিলের নিশ্চয়তা নেই, তারা আর্থিক ও স্বায়ত্তশাসনের ঝুঁকিতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে তারা বিদেশী সহযোগীদের ওপর নির্ভর করেন, ফলে তাদের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার দ্বার সব সময় উন্মুক্ত থাকে। পরামর্শ প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো তারা নিজেদের দাতা এবং সরকারের স্বার্থের মক্কেল হিসেবে উপস্থাপন করে। সিভিল সমাজ প্রতিষ্ঠান, যেমন এনজিওর মতো থিংক ট্যাংকগুলো দাতাদের তহবিল থেকে দীর্ঘদিন ধরে লাভবান হয়ে আসছে এবং তাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছে। এর ফলে থিংক ট্যাংকগুলোও আকর্ষণীয় সুযোগে পরিণত হয়েছে। প্রশিক্ষণ দেওয়া, কোর্স পড়ানো, অতিথি বক্তব্য বা থিংক ট্যাংকের জন্য পরামর্শক হিসেবে কাজ করার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা তাদের সামাজিক মর্যাদা বজায় রাখতে সক্ষম হন এবং এর ফলে একই সঙ্গে তাদের উপার্জন এবং সহযোগিতামূলক গবেষণার অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি পায়। অনেকে একাধিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে স্থায়ী সম্পৃক্ততা স্থাপন করেন। উচ্চমানের অভিজ্ঞতা ও দৃঢ়তা থাকায় থিংক ট্যাংকগুলোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা মূল্যবান হিসেবে বিবেচিত হন। একই ব্যক্তি বিভিন্ন খাতে কাজ করেন। ফলে একই ব্যক্তি জ্ঞান সমাজ এবং সিভিল সমাজে কাজ করায়, এই দুই ক্ষেত্রের মধ্যকার প্রাচীর ক্রমশ অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নমনীয় চুক্তি-ব্যবস্থার ফলে থিংক ট্যাংকগুলোর গবেষণাকাজ এবং এর ফলাফলের মান বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, জ্ঞান সমাজে বিদ্যমান ফাঁকফোকরগুলোর জন্য থিংক ট্যাংকগুলোর কিছুটা হলেও স্বার্থ উদ্ধার হচ্ছে। থিংক ট্যাংকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের সেবা গ্রহণ করার মাধ্যমে দাতা, নীতিনির্ধারক এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে অধিকতর গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করছে।

অধিক মাত্রায় ব্যক্তিগত যোগাযোগ এবং অনানুষ্ঠানিক সম্পর্কের ওপর নির্ভরশীলতার ফলে শাসন-প্রক্রিয়ায় একধরনের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা দৃশ্যমান হয়ে উঠছে, এর ফলে সুশাসনের কাঠামো প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সংগৃহীত উপাত্ত থেকে দেখা যাচ্ছে, যে রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে থিংক ট্যাংকগুলো কাজ করে, সেই পরিস্থিতির প্রতি সাড়া দিতে গিয়ে কয়েকজন বিশেষজ্ঞকে শীর্ষ পদগুলো দেওয়া হয়, যা থিংক ট্যাংকগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। নীতিনির্ধারক এবং বৃহত্তর সমাজে বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য থিংক ট্যাংকগুলোকে জনপরিমণ্ডলে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে হয়। ফলে তাদের এমন ব্যক্তির প্রয়োজন হয়, যারা তাদের ব্যক্তিগত যোগাযোগ ব্যবহার করে থিংক ট্যাংকগুলোর বার্তা আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহে পৌঁছে দিতে পারেন। ফলে দাতাদের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি এবং নাগরিক ও নীতিনির্ধারকদের কাছে একটি নির্দিষ্ট বিষয় অধিগম্য করতে এই প্রচারণা কৌশল গুরুত্বপূর্ণ। নাগরিক এবং নীতিনির্ধারকদের কাছে এই বার্তা পৌঁছানোর জন্য ভিন্ন ভাষা এবং যোগাযোগের মাধ্যমের প্রয়োজন হয়। এই কাজটি করতে থিংক ট্যাংক বা গণমাধ্যমে তাদের প্রধান মুখপাত্রদের এসব আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগের মাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হয় এবং একই সঙ্গে নিরপেক্ষ ও যথাযথ গবেষণা চালিয়ে যেতে হয়। কয়েকজন উত্তরদাতা থিংক ট্যাংকগুলোর অধিপরামর্শমূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়ার ঝুঁকির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন: গবেষণা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক প্রচেষ্টার পরিবর্তে আত্মপ্রচারকে (self-promotion) তারা অগ্রাধিকার দেয়। এর ফলে শুধু প্রধান ব্যক্তিদের শ্রীবৃদ্ধি ঘটে, কিন্তু থিংক ট্যাংকগুলোর প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে কোনো অবদান রাখে না।

নীতিনির্ধারণ এবং দৃঢ় পৃষ্ঠপোষকতাধর্মী আন্তযোগাযোগ

সিভিল সমাজের রাজনৈতিক অর্থনীতি বিশ্ববিদ্যালয় ও থিংক ট্যাংকের মতো সিভিল সমাজের কর্মকদের মধ্যকার মিথস্ক্রিয়ার প্রকৃতিকে এবং নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা শিক্ষক বা গবেষকদের জন্য খুব অল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে, তাই তারা থিংক ট্যাংকগুলোর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। অন্যদিকে, থিংক ট্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থাও স্থিতিশীল নয়। এর ফলে স্বল্পমেয়াদি, ফলাফলধর্মী চুক্তিগুলোর ওপর নির্ভরশীলতা তাদের দাতাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সীমাবদ্ধ রাখে এবং আরোহী গবেষণাপদ্ধতির পরিবর্তে অবরোহী ব্যবহার করে। এতে করে আধিপত্যশীল জ্ঞানভাষ্যকে সমালোচনা এবং মোকাবিলা করার সৃজনশীলতা ও সামর্থ্য হ্রাস পায়। এই পরিস্থিতি একই সঙ্গে গবেষণা প্রক্রিয়াকে দ্বিধাবিভক্ত করে এবং থিংক ট্যাংকগুলোকে অরাজনৈতিক, অতত্ত্বীয় উপাত্ত সংগ্রহমূলক কাজে সীমাবদ্ধ রাখে। থিংক ট্যাংকগুলোর নিজেদের মধ্যে এবং থিংক ট্যাংক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সম্পর্কে খুব কম ক্ষেত্রেই নীতি-সংলাপ এবং তদবির (lobbying) কার্যক্রম ভূমিকা পালন করে, কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা সতর্কভাবেই তাঁদের রাজনৈতিক অবস্থানে অটুট থাকেন। এটা বলা যায় যে ব্যক্তিগত সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা এবং প্রাতিষ্ঠানিক দৃঢ় অঙ্গীকারের অভাব থাকায় থিংক ট্যাংকগুলো নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়াকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রভাবিত করার সামর্থ্য পুরোপুরি অর্জন করতে পারছে না।

নীতিনির্ধারণে থিংক ট্যাংকগুলোর অবদান রাখার সামর্থ্য শুধু তাদের ওপর নির্ভর করে না। গবেষণানির্ভর অধিপরামর্শ গ্রহণ করতে সরকার কতটুকু প্রস্তুত, সেটাও বিবেচনার বিষয়। অধিকন্তু, সরকার থিংক ট্যাংকগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়ের প্রাতিষ্ঠানিক উপায় উন্মুক্ত করতে উত্সাহিত না হওয়ায়, থিংক ট্যাংকগুলোও রাজনৈতিক স্পর্শকাতর বিষয়গুলো এড়িয়ে চলার মাধ্যমে সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার চেষ্টা করে। এতে করে নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টিকোণ থেকে, থিংক ট্যাংকগুলোর গ্রহণযোগ্যতা এবং নীতিনির্ধারণের প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার সামর্থ্য হ্রাস পাচ্ছে। ফলে অধিকাংশ থিংক ট্যাংক নীতিনির্ধারকদের শুধু নীতিমালার প্রভাব সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করে এবং অন্য বিষয়গুলো নিয়ে স্বল্পমাত্রার গবেষণা এবং অধিপরামর্শমূলক কাজ করে। কয়েকজন উত্তরদাতার মতে প্রতিবেদন, নীতি-মন্তব্য এবং পরিচয়ধর্মী প্রকাশনা প্রকাশ করা হয় এবং এগুলোর কিছু কিছু কেউ কখনো পড়েও দেখে না। সরকারের চাহিদার সঙ্গে মিল রেখে থিংক ট্যাংকগুলো নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক সামর্থ্য বৃদ্ধি করার পরিবর্তে চিড় ধরা, পুনরাবৃত্তিমূলক এবং প্রায়ই পৃষ্ঠপোষণধর্মী নীতি-প্রণয়ন প্রক্রিয়ার মক্কেলে পরিণত হয়। তবে গন্তব্য (end) যাত্রাপথ (means) নির্ধারণে একক বিবেচ্য বিষয় হতে পারে কি না, তা এই প্রবন্ধের আলোচ্যসূচির বাইরে।

উপসংহার

একটি সক্রিয় সিভিল সমাজের উপস্থিতি আধুনিকতার একটি সূচক হিসেবে বিবেচিত হয়। জায়মান (nascent) এবং ভঙ্গুর গণতন্ত্রগুলোর জন্য এই সূচকটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। থিংক ট্যাংক এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সুখ্যাত ব্যক্তিদের কাছ থেকে প্রাথমিক উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এই বিষয়টিকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তাত্পর্যপূর্ণ আর্থিক বাধা বা সর্বব্যাপী রাজনৈতিক আনুগত্যের সংস্কৃতির কারণে জ্ঞান উত্পাদনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সম্ভাবনাময় অবদান বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং গবেষণা ফলাফলের মৌলিকত্ব এবং মানের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে।

জ্ঞান উত্পাদনকে বাণিজ্যিকীকরণের ফলে থিংক ট্যাংক এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো লাভবান হয়, কিন্তু তা প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক নয়, ব্যক্তিকেন্দ্রিক। থিংক ট্যাংকগুলোর দেওয়া স্বল্পমেয়াদি গবেষণাকাজের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বাড়তি আয়, কাজের অভিজ্ঞতা এবং দাতা সংস্থাগুলোর কাছে পরিচিতি লাভ করেন। ফলে নীতি-সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ার পরিবর্তে নীতি তৈরির কাঁচামাল তৈরি হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ধারাবাহিক গবেষণা, আলোচ্য বিষয় এবং পূর্বানুমিত ও নির্ভরশীল অর্থসংস্থানের নিশ্চয়তা না থাকায় থিংক ট্যাংকগুলোর আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক পন্থায় নীতিনির্ধারণকে প্রভাবিত করার সামর্থ্য হ্রাস পাচ্ছে।

নীতিনির্ধারণকে প্রভাবিত করতে হলে থিংক ট্যাংকগুলোকে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা এবং স্বাধীনতা বজায় রাখার মধ্যে একটি ভারসাম্য রাখতে হবে। উচ্চমানের গবেষণার জন্য বিদ্যায়তনিক কঠোরতা এবং স্বাধীনতা প্রয়োজন। অন্যদিকে, নীতি-প্রণয়নকে প্রভাবিত করার জন্য ব্যক্তিগত সম্পর্কও জরুরি। কিন্তু এই দুটি বিষয়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখাই মূল মুনশিয়ানার কাজ। ফলে থিংক ট্যাংকগুলোর উচিত হবে নিরপেক্ষভাবে রাজনৈতিক এবং নিয়মাত্মক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া। প্রাতিষ্ঠানিক অভিজ্ঞতা এবং উত্তরদাতাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে তাদের মত হচ্ছে, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী এবং দৃঢ় সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে থিংক ট্যাংকগুলোর চিন্তা করা এবং নীতি-প্রণয়ন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তৈরি করার সামর্থ্য বৃদ্ধি করা যাবে। ফলে ব্রাউন এবং গ্যাভেনটারের (২০০৮) সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হতে হয়। তাদের মতে, একাধিক প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণের মাধ্যমে আন্তদেশীয় গবেষণা নেটওয়ার্ক তৈরি করা প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয় এবং থিংক ট্যাংকগুলোর জন্য দলীয় রাজনীতি, পৃষ্ঠপোষকতা এবং ব্যক্তিগত সম্পর্কের গুরুত্ব স্বীকার করলে, বাংলাদেশে এসব সিভিল সমাজের প্রতিষ্ঠান কী ধরনের ভূমিকা পালন করতে পারে, সে সম্পর্কে আমাদের বোধ আরও সুস্পষ্ট হবে। যদিও তাদের রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ থেকে স্বাধীন থাকা এবং একটি সমালোচনামূলক কণ্ঠস্বরের প্রতিনিধিত্ব করার সামর্থ্য অমীমাংসিত থেকেই যাচ্ছে।

অনুবাদ: গোলাম মুস্তাফা

তথ্যসূত্র:

১.         চারটি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়) এবং দুটি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়)।

২.         চীন, ভারত, জাপান, তাইওয়ান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার পর।

গ্রন্থপঞ্জি

                Abelson, D. E., ed. 2009. Do Think Tanks Matter? Assessing the Impact of Public Policy Institutes. Montreal : Queen’s University Press.

                Ackoff, R. L. 1989. 'From Data to Wisdom'. Journal of Applied Systems Analysis 16 : 3-9.

                'Adding value to politics: Reflection on Bangladesh's democratic governance.' 2015. The Daily Star, July 30.

                www.thedailystar.net/op-ed/politics/reflection-bangladesh-democratic-governance-118564.

                Arocena, R., and J. Sutz. 2001. 'Changing Knowledge Production and Latin American Universities.' Research Policy 30 (8) : 1221-1234. doi : 10.1016/S0048-7333(00)00143-8.

                "Bangladesh's PM rejects claims of repression : 'I do politics for the people'." 2015. The Guardian, September 21.

                www.theguardian.com/world/2015/sep/21/bangladesh-prime-minister-rejects-accusations-of-authoritarian-rule?CMP= share_btn_fb.

                Bertucci, E. M., F. Borges-Herrero, and C. Fuentes-Julio. 2014. "Toward 'Best Practices' in Scholar–Practitioner Relations : Insights from the Field of Inter-American Affairs." International Studies Perspectives 15 (1): 54–72. doi:10.1111/j.1528-3585.2012.00511.x.

                Birgeneau, R. J. 2005. 'The Role of the University and Basic Research in the New Economy.' In Creating Knowledge, Strengthening Nations : The Changing Role of Higher Education, edited by G. A. Jones, P. L. McCarney, and M. L. Skolnik, ix-xv. Toronto : University of Toronto Press.

                Blair, H. 1998. 'Civil Society and Building Democracy : Lessons from International Donor Experience.' In Civil Society and International Development, edited by A. Bernard, H. Helmich, and P. B. Lehning, 65-80. Paris: Organisation for Economic Co-operation and Development (OECD).

                Blair, H. W. 2001. 'Civil Society, Democratic Development and International Donors.' In Bangladesh : Promise and Performance, edited by R. Jahan, 181-218. London : Zed Books.

                Brown, D. L., and J. Gaventa. 2008. Constructing Transnational Action Research Networks : Observations and Reflections from the Case of the Citizenship DRC. Institute of Development Studies Working Paper 302. Brighton : IDS.

                Devine, J. 2003. 'The Paradox of Sustainability : Reflections on NGOs in Bangladesh.' The Annals of the American Academy of Political and Social Science 590 (1): 227-242. doi :10.1177/0002716203257067.

                Devine, J. 2006. 'NGOs, Politics and Grassroots Mobilisation : Evidence from Bangladesh.' Journal of South Asian Development 1 (1) : 77–99.

                Habermas, J. 1996. Between Facts and Norms : Contributions to a Discourse Theory of Law and Democracy. Cambridge : Polity Press.

                Harsh, M., P. Mbatia, and W. Shrum. 2010. 'Accountability and Inaction : NGOs and Resource Lodging in Development.' Development and Change 41 (2) : 253–278.

                Huque, A. S. 2011. 'Accountability and Governance : Strengthening Extra-bureaucratic Mechanisms in Bangladesh.' International Journal of Productivity and Performance Management 60 (1) : 59–74.

                Huque, A. S., and M. T. Rahman. 2003. 'From Domination to Alliance : Shifting Strategies and Accumulation of Power by the Bureaucracy in Bangladesh.' Public Organization Review 3 (4) : 403-418.

                Kaldor, M. 2003. 'Civil Society and Accountability.' Journal of Human Development 4 (1) : 5-27.

                Kochanek, S. A. 2000. 'Governance, Patronage Politics and Democratic Transition in Bangladesh.' Asian Survey 40 (3) : 530–550. doi : 10.2307/3021160.

                Lewis, D. 2004. 'On the Difficulty of Studying Civil Society : Reflections on NGOs, State and Democracy in Bangladesh.' Contributions to Indian Sociology 38 (3) : 299–322.

                Maniruzzaman, T. 1992. 'The Fall of the Military Dictator : 1991 Elections and the Prospect of Civilian Rule in Bangladesh.' Pacific Affairs 65(2) : 203-224. doi : 10.2307/2760169.

                McGann, R., and K. Weaver, eds. 2011. Think Tanks and Civil Societies : Catalysts for Ideas and Action. New Brunswick : Transaction Publishers.

                Parnini, S. N. 2006. 'Civil Society and Good Governance in Bangladesh.' Asian Journal of Political Science 14 (2) : 189–211. doi : 10.1080/02185370601063191.

                Parnini, S. N. 2009. 'Public Sector Reform and Good Governance: The Impact of Foreign Aid on Bangladesh.' Journal of Asian and African Studies 44 (5) : 553–575.

                Pautz, H. 2011. 'Revisiting the Think-tank Phenomenon.' Public Policy and Administration 26(4): 419-435. doi: 10.1177/0952076710378328.

                Peters, M. A. 2003. 'Classical Political Economy and the Role of Universities in the New Knowledge Economy.' Globalisation, Societies and Education 1(2): 153-168. doi : 10.1080/ 1476772032000105483.

                Rashid, A. K. 2013. 'Efficacy of Think Tanks in Influencing

Public Policies : The Case of Bangladesh.' Asian Journal

of Political Science 21 (1) : 62–79. doi:10.1080/ 02185377.2013.793561.

                Rowley, J. 2007. 'The Wisdom Hierarchy : Representations of the DIKW Hierarchy.' Journal of Information Science 33 (2) : 163–180. doi : 10.1177/0165551506070706.

                Sarker, A. E. 2008. 'Patron-Client Politics and Its Implications for Good Governance in Bangladesh.' International Journal of

Public Administration 31(12): 1416–1440. doi:10.1080/ 01900690802194966.

                Srivastava, J. 2011. Think Tanks in South Asia : Analysing the Knowledge-Power Interface. London : Overseas Development Institute.

                UCG. 2013. 'List of Private and Public Universities.' University Grants Commission of Bangladesh. Accessed November 18, 2015. www.ugc.gov.bd/university/?action=private.

                'UK notes concern over civil society, press freedom.' 2014. The Daily Star, October 17. www.thedailystar.net/uk-notesconcern-over-civil-society-press-freedom-46130.

                Van der Borgh, C., and C. Terwindt. 2012. 'Shrinking Operational Space of NGOs–a Framework of Analysis.' Development in Practice 22 (8) : 1065–1081.

                White, G. 1994. 'Civil Society, Democratization, and Development (I): Clearing the Analytical Ground.' Democratization 1(3) : 375–390.

                Zafarullah, H. 2007. 'Bureaucratic Elitism in Bangladesh : The Predominance of Generalist Administrators.' Asian Journal of Political Science 15 (2): 161-173. doi : 10.1080/ 02185370701511339.

                Zafarullah, H., and R. Rahman. 2008. 'The Impaired State : Assessing State Capacity and Governance in Bangladesh.' International Journal of Public Sector Management 21(7) :

739-752.

পরিশিষ্ট-১

সাক্ষাত্কারদাতাদের তালিকা:

প্রতিষ্ঠান

ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স স্টাডিজ

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ

পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার

উন্নয়ন অন্বেষা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি

ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক (ইউএপি) বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)

অংশগ্রহণকারীদের নাম

মনজুর হাসান, ওবিই (ইনস্টিটিউশনাল অ্যাডভাইজর, আইজিএস, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়)

ড. সুলতান হাফিজ রহমান (ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) নির্বাহী পরিচালক)

অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান (নির্বাহী পরিচালক, সিপিডি)

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য (ডিস্টিংগুইশ ফেলো, সিপিডি)

ড. বিনায়ক সেন (গবেষণা পরিচালক, বিআইডিএস)

ড. এস এম জুলফিকার আলী (গবেষণা এবং যোগাযোগ পরিচালক, বিআইডিএস)

মুন্সি ফায়েজ আহমদ (চেয়ারম্যান, বোর্ড অব গভর্ন্যান্স, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ )

ড. শাহীন আফরোজ (গবেষণা পরিচালক, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ)

ড. আহসান এইচ মনসুর (নির্বাহী  পরিচালক, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ)

অধ্যাপক বজলুল খন্দকার (সিনিয়র ফেলো, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ)

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান (নির্বাহী চেয়ারম্যান, পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার)

খন্দকার সাখাওয়াত আলী (রিসার্চ ফেলো (বর্তমানে ফেলো: অনুবাদক), পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার)

রাশেদ তিতুমীর (চেয়ারম্যান, উন্নয়ন অন্বেষা)

অধ্যাপক মাহবুবুল মোকাদ্দেম আকাশ (অর্থনীতির অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)

ড. মাহবুবা নাসরিন (ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারাবিলিটি স্টাডিজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় )

ড. মানস কুমার চৌধুরী (নৃবিজ্ঞানের অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়)

ড. শামসুল হক (ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইসিসিসিএডি) পরিচালক, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ)

ড. এম ইমদাদুল হক (চেয়ারম্যান, ডিপার্টমেন্ট অব জেনারেল অ্যান্ড কন্টিনিউইং এডুকেশন, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি)

অধ্যাপক এটিএম নুরুল আমিন (অধ্যাপক এবং ডিন, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি)

জামিলুর রেজা চৌধুরী (উপাচার্য, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক (ইউএপি) বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট))