নতুন শ্রেণী প্রিকারিয়েত: অনিশ্চয়তার মধ্যে কায়দা করে বেঁচে থাকা জীবন

অস্থায়ী চাকরি, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা তাদের মধ্যে যে ক্রোধ তৈরি করে, বৈরী সরকারের বিরুদ্ধে সেটাই তারা উগরে দেয়।

সারকথা
প্রিক্যারিয়েত কারা? এরা সাধারণ যুবজনতা। শিল্পভিত্তিক পুঁজিবাদে শ্রমিক ও পেশাজীবীর জীবনে শোষণ থাকলেও নির্দিষ্ট পেশায় নির্দিষ্ট স্থানে বাঁধাধরা জীবনের নিশ্চয়তা ছিল। ভবিষ্যতের রূপরেখা ছিল। এদের বলা হতো প্রলেতারিয়েত। রূপান্তরিত পুঁজিবাদের বাজার অর্থনীতিতে বিপুল সংখ্যক মানুষের কাজ-বসবাস ও জীবনধারা আর নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে আটকে নেই, নেই চাকরি ও কাজের স্থায়িত্ব। আশা-নিরাশার দোলাচল এদের নিত্যসঙ্গী। অস্থিতিশীলতার জীবনে গতির চাইতে দুর্গতি বেশি। যখন সমাজে হতাশা, অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা, রাজনীতিতে অমানবিকতা, তখন ভবিষ্যতের ভরসাও থাকে নাগালের বাইরে। ইতালিতে পরিচিতি দুঃস্থজনের সাধু প্রিক্যারিয়েতের নামে সমাজবিজ্ঞানীরা এদের নাম দিয়েছেন প্রিক্যারিয়েত। এরা বিপন্ন আবার বিপজ্জনকও। নতুন পাওয়া শিক্ষা ও ফেসবুক-টুইটার-হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে এরা দ্রুতই জমায়েত হওয়া শিখছে। অস্থায়ী চাকরি, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা তাদের মধ্যে যে ক্রোধ তৈরি করে, বৈরী সরকারের বিরুদ্ধে সেটাই তারা উগরে দেয়। এরাই অকুপাই ওয়ালস্ট্রিট আন্দোলন করে, তাহরির থেকে তাকসিম স্কয়ারে ঘটায় গণবিদ্রোহ। কোনো কোনো সমাজবিজ্ঞানী একে বলছেন বিপজ্জনক শ্রেণি।

ভূমিকা

কার্ল মার্ক্সের ‘প্রলেতারিয়েত’ ধারণাটির সঙ্গে আমরা কমবেশি পরিচিত। শিল্পসমাজে ‘প্রলেতারিয়েত’ হলো বিত্তহীন বা স্বল্পবিত্ত শ্রম বিক্রেতা শ্রেণি। শিল্পসমাজে কারখানাকে কর্মস্থল ধরে যে বঞ্চিত ও শোষিত শ্রেণিকে মার্ক্স ‘সর্বহারা’ নাম দেন, তারা বস্তুগত অর্থে ততটা সর্বহারা নয়। উৎপাদনযন্ত্রের মালিকানায় কোনো শরিকানা নেই বলে ন্যায্য পাওনাটুকু চাইতে না পারার অক্ষমতাই মূলত সর্বহারার লক্ষণ। মজুরির নিয়ন্তা মজুরিদাতা মালিক; তিনিই ঠিক করেন মজুরির পরিমাণ। মজুরিকে সামাজিক উৎপাদন–সম্পর্কের অপরিহার্য অংশ গণ্য না করে নিছক বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত করতে পারার ক্ষমতাই পুঁজিবাদের মূল শক্তি।

প্রলেতারিয়েত ব্যাখ্যার এই দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে প্রিকারিয়েতাইজেশন বা প্রিকারিয়েতকরণ ভালো বোঝা যায়। বাজার অর্থনীতিতে এ রকম ‘প্রিকারিয়াস’ বা চূড়ান্ত অনিশ্চিত শ্রম বিক্রেতা গোষ্ঠীই আসল সর্বহারা বা মুলামুলির ক্ষমতাহীন শ্রেণি। ইংরেজিতে যাকে বলে ‘বার্গেনিং পাওয়ার’ তা থেকে এই শ্রেণি বঞ্চিত বিধায় তারা অবদমিত ও শোষিত। এই অবস্থা বোঝাতেই ‘প্রিকারিয়েত’ বা ‘প্রিকারিয়াস প্রলেতারিয়েত’ ধারণাটির উদ্ভব।

ইংরেজি ‘প্রিকারিয়াস’ শব্দের জুতসই বাংলা প্রতিশব্দ নেই। ভেঙে বললে ‘অনিশ্চিত’, ‘অনির্ভরযোগ্য’, অনিয়ন্ত্রণযোগ্য, অনিয়মশীল, অপরিণতিশীল, অপরিকল্পনাযোগ্য, এবড়ো-থেবড়ো, এলোপাতাড়ি, এলোমেলো, ইত্যাদি ভাবের মিশেল বলা যেতে পারে। মূলত জীবিকাদায়ী খাটুনির প্রেক্ষিতেই শব্দটির ব্যবহার দেখা যায়। ইংরেজিতে ‘প্রিকারিয়াস জব’, ‘প্রিকারিয়াস ওয়ার্ক অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট’ শব্দগুচ্ছের ব্যবহার তো নিয়মিতই নজরে আসে। ভারত ও বাংলাদেশের বড় শহরগুলোতে সকালবেলা কোনো নির্দিষ্ট স্থানে ঝাঁকা, কোদালসহ একদল মানুষ দিনচুক্তিতে ঠিকা কাজ পাওয়ার জন্য জড়ো হন। শ্রম ছাড়া তাঁদের আর কিছুই বিক্রয়যোগ্য নয়। কাজ পেলে কোনোভাবে কষ্টেসৃষ্টে বেঁচেবর্তে থাকা। না পেলে উপোস করা। কাজ পেলেও দিনের মাঝপথে ‘কাজ ভালো হচ্ছে না’ অজুহাতে ঠিকাদানকর্তা কাজ থেকে সরিয়ে দিতে পারেন। এ রকম পরিযায়ী দিনমজুরদের সচরাচর কোনো সংগঠন বা সমিতি হয় না। সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী কোনো রাজনৈতিক দল তাদের হয়ে কথা বলতে এগিয়ে এলেও ব্যর্থতাই হয়ে ওঠে পরিণতি। কারণ, তাঁরা হরদম অভিবাসনমুখী। কাজের খোঁজে ছুটতে থাকেন এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায়। অস্থায়ী বসবাস আর অস্থায়ী কর্মস্থানের জন্য তাঁদের সমবায় সংগঠন কার্যকর থাকে না। তাঁদের সময়ই–বা কোথায় অধিকারের জন্য সংঘবদ্ধ হওয়ার! যখন যেখানে দুকড়ি দুমুঠি যা-ই জোটানো সম্ভব, সেখানেই তাঁদের ধ্যান-জ্ঞান-অভিনিবেশ। পরিযায়ী শ্রমিকদের বাস্তবতা আমলে নিলে ‘প্রিকারিয়েত’ ধারণাটি পরিষ্কার হতে পারে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ‘প্রিকারিয়েত’ কিংবা ‘প্রিকারিয়েতাইজেশন’ ধারণাটি এখনো খুব একটা পরিচিত নয়। এ বিষয়ে আমাদের দেশে বিশেষ কোনো গবেষণার সন্ধান মেলেনি। গবেষণা কিছু হয়েছে মূলত পশ্চিমে। ফলে প্রথমে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট থেকে জানাশোনা ও উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন। তারপর বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তুলনামূলক আলোচনা উপস্থাপনের দরকার হবে।

প্রিকারিয়েত ও প্রিকারিয়েতাইজেশন

গত ২০০ বছরে পুঁজিবাদী উৎপাদন-সম্পর্ক দ্রুত বদলেছে। সবচেয়ে বেশি বদলেছে গত পাঁচ দশকে। তথ্যপ্রযুক্তি, মুক্তবাজার অর্থনীতি, পণ্য ও সেবার বিশ্বময় অবাধ চলাচল এবং বাজারজাতকরণের পুঁজিবাদী আয়োজন সত্তরের দশক থেকে দ্রুত বলীয়ান হয়েছে। বর্তমান সময়ের বাণিজ্যের ধরন ষাটের দশকের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। শিল্পোৎপাদনের জন্য ভূমি-শ্রম-মূলধন-সংগঠনের ধ্রুপদি নিয়ম আর মানার প্রয়োজন নেই। সহজ উদাহরণ নাইকি, টমি হিলফিগার, র‍্যাংলার, অ্যাডিডাস ইত্যাদি বহুজাতিকের মূল যে দেশে সেখানে কোনো কারখানার প্রয়োজন নেই। একটি বা কয়েকটি ঘর নিয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কয়েকটি কম্পিউটার, ইন্টারনেট সংযোগ এবং কয়েকজন বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ থাকলেই চলে। এ হেন কোম্পানির জন্য পোশাক, জুতা বা অন্যান্য সামগ্রী উৎপাদন করে দেবে অন্যান্য দেশ। যেমন বাংলাদেশ, ভারত, চীন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, মেক্সিকো, ব্রাজিল, হন্ডুরাস, হাইতি, নাইজেরিয়া ইত্যাদি। সোজা কথা, একসময়ের তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নতির ক্ষুধা কাজে লাগানো সহজ। তাদের দিয়েই, তাদের ভূমি-শ্রম-সংগঠন ব্যাবহার করেই আকাশছোঁয়া মুনাফা কামানো সম্ভব। শুধু পুঁজি ও আদেশ দেওয়ার ক্ষমতা থাকলেই চলে। এই পদ্ধতির ইংরেজি নাম ‘আউটসোর্সিং’। মূল কথা, অন্যদের দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়ার অর্থনীতি। বলা হয় প্রিকারিয়েতরা শহরকেন্দ্রিক; কিন্তু এখন গ্রামগঞ্জেও প্রিকারিয়াতের দেখা মিলছে।

প্রিকারিয়েত কারা? শিল্পসমাজ বা পুঁজিবাদী সমাজে ভূমি, শ্রম ও পুঁজি ব্যবহারের মাধ্যমে একটি শিল্প–কারখানা গড়ে ওঠে। সেখানে আমরা পুঁজি, শ্রম, মূলধন ও ব্যবস্থাপনা—এই চারটি দিক দেখি। পাশাপাশি আমরা দেখি একটা ‘ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ’ ও ‘ফরওয়ার্ড লিংকেজ’। ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজের দিকে থাকে অনেক কিছু। যেমন একটা জুতা তৈরির ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ অনেক বড়। যাঁরা গরু পালছেন, গরু বা ছাগল যাঁরা বাজারে নিয়ে যাচ্ছেন, ফড়িয়া, লবণ দিয়ে চামড়াটা যাঁরা প্রক্রিয়াজাত করছেন, ট্যানারিতে আবার যাঁরা প্রক্রিয়াজাত করছেন, তারপর সেটা যাচ্ছে ফ্যাক্টরিতে। এসবই ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজের মধ্যে পড়ে। ফ্যাক্টরিতে পণ্যটা তৈরি হওয়ার পর সেখানেও বিশাল একটা চেইন আছে। পণ্যের প্যাকেজিং, কাভার্ড ভ্যানে করে পণ্য সরবরাহ—এসবে অনেক লোক কাজ করছেন। এই পুরো প্রক্রিয়া একটা সামাজিক যোগাযোগ, একে শুধু অর্থনৈতিক যোগাযোগ হিসেবে ধরলে বিরাট ভুল বোঝাবুঝি হবে। এই প্রক্রিয়া যখন কোনো শিল্পকারখানার মধ্য দিয়ে যায়, তখন সেখানে অনেক মানুষ যুক্ত থাকেন। তাঁদের বেতনে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। তাঁদের চাকরি থাকতে পারে, তাঁরা বেতন পেতে পারেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক বড় কোম্পানিগুলো আমাদের মতো দেশ থেকে আউটসোর্সিং করছে কেন? যাতে ভূমি বন্দোবস্ত, শ্রম ভাড়া করা ও পুঁজির নিরাপত্তা–ঝুঁকিটা তাদের নিতে না হয়। তারা এই ঝুঁকি থেকে রেয়াত পাচ্ছে আবার প্রচুর মুনাফাও অর্জন করছে।

সাধারণ ধারণা হলো, প্রিকারিয়েতদের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পুঁজি না থাকা (অর্থকড়ির টানাটানি ছাড়াও প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষাদীক্ষাহীনতা, যোগাযোগের সক্ষমতা না থাকা, বৃহত্তর বহির্বিশ্ব সম্পর্কে ধারণা না থাকা, সম্পর্কের গণ্ডি সীমিত থাকা) তাদের প্রিকারিয়েত হতে বাধ্য করে। তবে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পুঁজিধারী প্রিকারিয়েতদের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। শিক্ষিতদের যাঁরাই বিদেশে গিয়ে বেঁচে থাকার খাতিরে নাগালের মধ্যে যে কাজই পান, করতে ছোটেন—তাঁরাও প্রিকারিয়েত। অনিঃশেষ অনিশ্চয়তায় তাঁরাও দগ্ধ হন। অনেকেই ছিটকে পড়েন মানবিক জীবনবোধ ও জীবনের সহজ আনন্দ থেকে। গভীর বিশ্লেষণ প্রয়োজন, কেন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিরাও ট্যাক্সি বা স্কুটি ড্রাইভিং, পিৎজা ডেলিভারি, কুরিয়ার সার্ভিসের পোস্টম্যান, রেস্তোরাঁর বেয়ারা, দূরযাত্রার বাস-ট্রেনের কন্ডাক্টর বা কল সেন্টার ও টেলিমার্কেটিং এবং ফ্রিল্যান্সিং ধরনের সাময়িক পেশা গ্রহণের চক্রে আটকা পড়তে বাধ্য হচ্ছেন। নৃবিজ্ঞানী ডেভিড গ্রেবার নিছক জীবিকার্জনের জন্য দক্ষতা ও প্রশিক্ষণের বাইরে নিরানন্দময়, অপ্রচলিত, অপছন্দনীয়, অর্থহীন ও মনঃসংযোগ–বিবর্জিত ক্লান্তিকর কাজের নাম দিয়েছেন ‘bullshit jobs’ (Graebar, David 2018)। এসবের প্রতিক্রিয়া হিসেবে কী রকম সামাজিক বিপর্যয় আসন্ন এবং কেন আমাদের এখনই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন, তা নিয়ে আলোচনাও করেছেন। ‘কাজের বা উপার্জনের ছোট-বড় নেই, সম্মান-অসম্মানের বিষয় নেই’—এই মরমী ভাষ্যের আড়ালে চাপা পড়ে থাকে বৈষম্যের বাস্তবতা। অসংখ্য শিক্ষিত ও দক্ষ শ্রমশক্তির প্রিকারিয়াস উপার্জনে বাধ্য হওয়ার কারণ আলোচনা থেকে এভাবে সরে থাকা অনুচিত।

গাই স্ট্যান্ডিং (Standing, 2011) এই শ্রমজীবী বর্গটিকে সরাসরি ‘a dangerous class’ বা ‘বিপজ্জনক শ্রেণি’ নাম দিয়ে আলোচনায় আনলেন। Lorna Fox O’Mahony এবং তাঁর কয়েকজন সহযোগী গবেষক নৈতিক ও মানসিক উত্থান-পতন-চড়াই-উতরাইয়ে বিধ্বস্ত এই শ্রেণির নাম দিলেন ‘the vulnerable demons’ বা ‘বিপন্ন দানবকুল’। ক্রাইনেট মার্কেটিং সলিউশনের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা সের্গেই গলুবেভ বরং প্রিকারিয়ান বা প্রিকারিয়েতদের দেখছেন ‘মানবসম্পদের জন্য নব্য হুমকি’ (‘a new threat to human capital’) হিসেবে।

প্রিকারিয়েত ভাবনার সাম্প্রতিকতম পরিপ্রেক্ষিত

২০১১ একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর। এ বছর গাই স্ট্যান্ডিং লিখলেন প্রান্তিক শ্রম–সম্পর্কের সামাজিক ব্যবচ্ছেদমূলক গ্রন্থ The Precariat: A Dangerous Class (Guy Standing, 2011)। বইটি প্রকাশিত হওয়ার আগে আগে মে মাসে ভ্যানিটি ফেয়ার ম্যাগাজিনে ছাপা হলো নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিৎজের ‘Of the 1%, by the 1%, for the 1%’ ধারণাটি (Stiglitz, J. 2011)। এতে জানানো হলো, নব্য উদারবাদী শ্রমব্যবস্থা মাত্র ১ ভাগ মানুষকেই সর্বময় ক্ষমতাশালী করে তুলছে। মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে সব শ্রমজীবীর আয়বৃদ্ধি দেখানো হয়েছে বটে, তবে বণ্টনের বৈষম্য অস্বাভাবিকভাবে ১%–কেই সব সুবিধার অধিকারী করে তুলছে। একই বছরে সামাজিক সাম্যমুখী অ্যাডবাস্টার ম্যাগাজিন ‘অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট আন্দোলন’–এর ডাক দেয়। আন্দোলনটির মূল স্লোগান ছিল, ‘আমরাই ৯৯ ভাগ’ (we are the 99%)। অ্যাডবাস্টার–এর বক্তব্য ছিল: বিশ্বায়ন ও মুক্তবাজার নীতিমালা যুক্তরাষ্ট্রে সম্পদ পুনর্বণ্টনের বৈষম্যকে সর্বকালের নিকৃষ্টতম পর্যায়ে নিয়ে গেছে। শোষকের কালিমা নিয়ে মাত্র ১ ভাগ মানুষ বিত্তে ফুলেফেঁপে উঠেছে।

উল্লেখ্য, ১৯৮০ সালেই সামাজিক ইতিহাসবিদ Howard Zinn তাঁর সুবিখ্যাত গ্রন্থ A People’s History of the United States (2015)–এ ‘দ্য কামিং রিভোল্টস অব দ্য গার্ডস’ প্রত্যয়টি ব্যবহারের মাধ্যমে ৯৯% মানুষকে ‘দ্য পিপল’ বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। ভবিষ্যদ্বাণীও করেছিলেন যে টালমাটাল সময় আসন্ন, যখন ৯৯% জনগণ একই মানসিকতায় চলে আসবে। ২০০৫ সালে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ পল ক্রুগম্যানও মার্কিন কংগ্রেসের অর্থ ব্যবস্থাপনা নথি পর্যালোচনা করে নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় লেখেন যে ১৯৭৯ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যম আয়ের জনতার আয় বেড়েছে ২১%, কিন্তু অতিধনীদের মাত্র ০.১%–এর আয় বেড়েছে ৪০০% (Krugman, P. 2005 )। ২০১১ সালে নিউইয়র্কের বাণিজ্যকেন্দ্রের পাশে জুকোট্টি পার্কের অকুপাই আন্দোলনের সমাবেশ পুলিশ ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তখন সিদ্ধান্ত হয় ব্যাংক, বীমাসহ সব ধরনের বহুজাতিক বাণিজ্য সংস্থার দপ্তরের সামনে সামাজিক সাম্যবাদী কর্মীরা লাগাতার সমাবেশ করে যাবেন। সে সময়ও ক্রুগম্যান ‘আমরা ৯৯%’ ধারণাটিকে সঠিক বলে ঘোষণা দেন এবং আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে পত্রপত্রিকায় মতামত কলাম লেখেন।

প্রিকারিয়েতরা নব্য উদারবাদী অর্থনীতির শিকার। তাঁরা এক সুবিশাল শ্রমজীবী বর্গ, যে বর্গে প্রতিদিনই দলে দলে নতুন প্রিকারিয়েত যোগ দিচ্ছেন। কিন্তু জীবনযাত্রার ঘানি টানতে তাঁদের প্রাণপাত করতে হচ্ছে। প্রিকারিয়েতদের সংগঠিত করার ও সংগঠিত রাখার কাজটিও খুবই কঠিন।

‘অকুপাই’ আন্দোলনটি অভাবিত সাফল্য পেয়ে যায়। বিশ্বের দেশে দেশে ‘অকুপাই টুগেদার মুভমেন্ট’ দানা বাঁধে। মার্কিন কংগ্রেসেও আন্দোলনটি আলোচনায় আসে। সাম্যবাদী কর্মিবাহিনীর পিটিশনগুলো গৃহীতও হয়। আন্দোলনটির বিশ্বময় জনপ্রিয়তার পেছনে মূল অবদান ছিল বিপুলসংখ্যক প্রিকারিয়াতের অংশগ্রহণের। সম্ভবত হাওয়ার্ড জিন কথিত সমরূপ ভাবনা একই সময়ে প্রকাশিত হওয়ার সুফল ছিল এটি। একই বছরে কাছাকাছি সময়ে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) একটি সিম্পোজিয়াম আয়োজন করে। প্রিকারিয়েত শ্রমজীবীরা সিম্পোজিয়ামে অংশ নেন। বিষয়ও নির্ধারিত হয় ‘ফ্রম প্রিকারিয়াস ওয়ার্ক টু ডিসেন্ট ওয়ার্ক’। শিরোনামই বলে দেয়, অমানবিক ‘প্রিকারিয়াস শ্রম’ ‘পরিচ্ছন্ন শ্রম’ নয়। সাম্প্রতিক শহুরে শ্রমিকও এই অনির্ভরযোগ্য ও অনিশ্চিত বাধ্যতামূলক শ্রমব্যবস্থার নিগড় থেকে মুক্তিপ্রত্যাশী।

আইএলওর সিম্পোজিয়ামে দেখা গেল, অংশগ্রহণকারীরা ‘অকুপাই টুগেদার’ আন্দোলনের মতো বিষয়কেই তাঁদের ধ্যানজ্ঞান বলে বিবেচনা করছেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল প্রিকারিয়েতরা নব্য উদারবাদী অর্থনীতির শিকার। তাঁরা এক সুবিশাল শ্রমজীবী বর্গ, যে বর্গে প্রতিদিনই দলে দলে নতুন প্রিকারিয়েত যোগ দিচ্ছেন। কিন্তু জীবনযাত্রার ঘানি টানতে তাঁদের প্রাণপাত করতে হচ্ছে। ২০১২ সালে সিম্পোজিয়ামের প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, Outcome Document to the Workers’ Symposium on Policies and Regulations to combat Precarious Employment (ILO 2012)। প্রতিবেদনটিতে শ্রমজীবী মানুষের দেওয়া পরামর্শের আলোকে বেশ কিছু মানবিক নীতিমালা ও আইনি প্রস্তাব রাখা হয়েছিল। সেগুলো বাস্তবায়নের বিষয়টি অবশ্য এখনো তেমন এগোয়নি। কারণ সেই একই, প্রিকারিয়েতদের সংগঠিত করার ও সংগঠিত রাখার কাজটি খুবই কঠিন। ব্রিটিশ সামাজিক অর্থনীতিবিদ গাই স্ট্যান্ডিং ‘কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো’র আদলে প্রথম ‘প্রিকারিয়েত ম্যানিফেস্টো’ ধারণাটি নির্মাণ করলেন। তিনি যথাযথভাবেই এই নতুন সামাজিক বর্গের চরিত্র এঁকেছেন। তাঁর মতে, প্রিকারিয়াস অনিশ্চতা–তাড়িত বর্গ। তারা বিপ্লবের উপযোগী নয়! কারণ, শ্রেণি-সচেতনতা ও সংগঠনের অভাব। প্রিকারিয়েতদের রাজনৈতিক বোধশূন্যতা, দুর্বলতা, সংগঠনহীনতা ও দর্শনহীনতার ষোলো আনা সুযোগ নেয় মুনাফা-ক্ষুধার্ত পুঁজিপতিরা।

প্রিকারিয়াতাইজেশনের স্বভাব-চরিত্র

এক. আউটসোর্সিং, পুটিং আউট সিস্টেম বা সাব–কন্ট্রাক্টিং: বিশ্বায়ন, নব্য উদারবাদী অর্থব্যবস্থা ও মুক্তবাজার অর্থনীতি চিরাচরিত শ্রমনির্ভর জীবন-জীবিকার খোলনলচে বদলে দিয়েছে। ‘আউটসোর্সিং’ হয়ে উঠেছে আধুনিক পুঁজিবাদের অন্যতম প্রধান ধমনি। এ পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য হলো, উন্নয়নশীল দেশের সস্তা মজুরির সুযোগ নিয়ে মুনাফাঘন অর্থকরি ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ করিয়ে নেওয়া। গত চার দশকে বৈশ্বিক বাজার অর্থনীতির নিয়ন্তাদের প্রয়োজনে ভারতে ব্যাঙের ছাতার মতো কয়েক লাখ কল সেন্টার গজিয়ে ওঠে। ‘টেলিমার্কেটিং’ ধারণাটির সঙ্গে পৃথিবী পরিচিত হতে শুরু করে। বড় বড় বহুজাতিক, ব্যাংক, বীমা, লগ্নি প্রতিষ্ঠানসহ সেবাদাতা অসংখ্য প্রতিষ্ঠান ভারতের শিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের মাধ্যমে ভোক্তাদের কাছে পণ্য ও সেবার বিজ্ঞাপন প্রচারের বাজার তৈরি করে। টেলিফোনে বেচা–কেনাসহ ক্রেতা-ভোক্তাদের সমস্যা সমাধানও এই কার্যক্রমের অংশ হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের ফুডপান্ডার খাবার ঘরে পৌঁছে দেওয়া কর্মিরা, বিভিন্ন সদাইপাতি প্রতিষ্ঠানের গৃহসেবা—পণ্য ঘরে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাকারী শ্রমগোষ্ঠী, হোটেল-রেস্তোরাঁর সেবাদানকারী বাহিনী, সেলস গার্ল, দূরপাল্লার-স্বল্পপাল্লার যানবাহনের হেল্পার-কন্ডাক্টরসহ নানা রকম সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিরাও আসলে প্রিকারিয়েত। কার্ল মার্ক্স কথিত ‘লুম্পেন প্রলেতারিয়েত’ তাঁরা নন, তবে ফ্রাঞ্জ ফানোঁর বলা ‘আন্ডার ক্লাস’ ধারণাটি তাঁদের বেলায় প্রযোজ্য। কথা উঠতে পারে, বিশাল গার্মেন্টস শ্রমজীবীরাও কি প্রিকারিয়েত? হ্যাঁ, তাঁদের শিল্প সংগঠনের প্রাতিষ্ঠানিক কর্মিবাহিনী মনে করা হলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তাঁরা প্রিকারিয়েত ভিন্ন অন্য কিছুই নন। কেন নন, সে আলাপে পরে ফিরব।

সহজে মুনাফার পাহাড় গড়ে দিতে দারুণ সহায়ক প্রিকারিয়েতাইজেশন। এই ব্যবস্থায় ধনী দেশের বহুজাতিকদের স্বদেশে শিল্পায়নের ঝক্কি পোহাতে হয় না অথচ খরচ বাঁচিয়ে মুনাফা করা যায় স্বভাবিকের তুলনায় বহুগুণ বেশি। এই ব্যবস্থার প্রশ্রয়েই সফটওয়্যার–শিল্পের আকাশচুম্বী খরচও পাই পয়সায় নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। মার্কিন মুলুকে একটি ব্যাংক পরিচালনা সফটওয়্যার নির্মাণের যে খরচ, তার ১০ বা ২০ ভাগের ১ ভাগ খরচে ভারত বা বাংলাদেশ থেকে তা করিয়ে নেওয়া সম্ভব। বাংলাদেশের গার্মেন্টস ব্যবসাও শিল্পায়ন নয়। এটা হলো বিশ্ববাজারের ক্রেতাদের জন্য সস্তা শ্রম-ভিত্তিক, শ্রমঘন, যন্ত্রনির্ভর বড় আকারের দরজিঘর মাত্র। বেলুনের মতো ফুলে ওঠা এই পদ্ধতিকে কখনো ‘পুটিং আউট’ সিস্টেম কখনো সাব-কন্ট্রাক্টিং বলা হয়। লাতিন আমেরিকার প্রায় সব দেশে, ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে এবং আফ্রিকার প্রায় সব উন্নয়নশীল দেশে সস্তা শ্রমিকের জোগান অফুরান। ফলে শ্রমিক ঠকিয়ে কাঁচা টাকার পাহাড় গড়ার লোভে এসব দেশেও পশ্চিমা বিশ্বের বহুজাতিকদের সেবাদানকারী এক মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়াতন্ত্র বিকশিত হয়ে উঠেছে। এরকম বিকাশমান অর্থনীতির পোশাকি ও কেতাবি নাম ‘উদ্যোক্তা সৃজন’ ও ‘কর্মসংস্থান ও শ্রমবাজার বিকাশ’ প্রকল্প। তাতে বিশ্বময় কোটি কোটি তরুণ–তরুণীর বেকারত্ব সমস্যার সুরাহা হয়েছে বটে, তবে বেশির ভাগই ন্যায্য মজুরি বঞ্চনার আধার হয়ে উঠেছে, পেশা হয়ে ওঠেনি।

দুই. ভাষার পুঁজীকরণ ও ক্ষেত্রবিশেষে লাভের গুড়ে ভাগ বসানো: কল সেন্টার–বাণিজ্যের মূল পুঁজি ইংরেজি বুঝতে ও বলতে পারা। প্রিকারিয়ান কাজেও ভাষার পুঁজিতে রূপান্তর হওয়ার ঘটনা নতুন অর্থনৈতিক প্রপঞ্চ। সত্তরের দশকের আগে পর্যন্ত এটা ততটা গুরুত্ব পায়নি। আশির দশকের পর থেকে ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক উপনিবেশে কল সেন্টার অর্থনীতি বিরাটাকার হয়ে ওঠে। কল সেন্টারের সংখ্যার দিক থেকে ভারতের পরই ফিলিপাইনের স্থান।১০ উদ্দেশ্য, সাবেক উপনিবেশের শিক্ষিত অংশের ইংরেজি ভাষায় যোগাযোগের দক্ষতা কাজে লাগিয়ে মুনাফা অর্জন। অসামান্য লাভের গুড়ের লোভে প্রিকারিয়েত খাতটি ধনী দেশে ফেরতও আসতে শুরু করে। যেমন ইংরেজিতে যোগাযোগ দক্ষতারও রকমফের আছে। ভিনদেশের কল সেন্টারকর্মীদের উচ্চারণ মার্কিন বা ব্রিটিশ নাগরিকদের উচ্চারণের মতো হওয়ার কথা নয়। সে কারণে বিদেশি সেন্টারগুলোর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ব্রিটেনের ভেতরেই অসংখ্য কল সেন্টার গড়ে উঠেছে। এসব কল সেন্টারে প্রকৃত স্থানীয় ইংরেজিভাষীরা নিয়োগ পেলেও ব্যবস্থাপনা উন্নয়নশীল দেশগুলোর কল সেন্টারের মতোই। মজুরিও বিশেষ বেশি নয়। বরং সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরিকাঠামোর কাছাকাছি। অর্থাৎ প্রিকারিয়েতাইজেশন শুধু ভিনদেশেই শ্রম শোষণের হাতিয়ার নয়, ধনী দেশের বাজারেও প্রিকারিয়াতের সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটে। মার্কিন কর্মসংস্থান প্রতিষ্ঠান জিপ্পিয়া Telemarketer Demographics and Stataistic in the US শিরোনামের ২০২০ সালের একটি গবেষণাকর্মে উল্লেখ করে যে ২০১৯ সাল নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রে কল সেন্টারের কর্মিসংখ্যা ছিল ১,১৯,২২০ জন। শ্রমিকদের ৬২ ভাগই নারী এবং তাঁদের আয়-রোজগার সব শ্রমিকের আয়ের ৯৪ শতাংশ । ৩৭ বছর বয়সের বেশি বয়সী কেউই এই পেশায় নেই। কর্মীদের ৬০ ভাগই শ্বেতকায়।১১ অর্থাৎ খোদ যুক্তরাষ্ট্রসহ ধনী দেশগুলোতেও প্রিকারিয়েত বর্গটি কলেবরে বাড়ছে। যুবা বয়সীরাই প্রিকারিয়ান উপার্জনি কর্মকাণ্ড ব্যবস্থাপকদের মোক্ষম টার্গেট।

তিন. কল সেন্টার-নির্ভর পাঁচ ধরনের নব্য সামাজিক পুঁজিব্যবস্থার সৃষ্টি: ২০০২ থেকে ২০০৪ সালে কল সেন্টারের ‘আউটসোর্সিং’ বাজার সম্পর্কে পঠনপাঠনে বুঝতে সক্ষম হই যে শ্রম–সম্পর্ক বিবেচনায় বিশ্ব বাণিজ্যমহল কমপক্ষে পাঁচ ধরনের নব্য সামাজিক পুঁজিব্যবস্থা সৃষ্টি করেছে। প্রথম পুঁজি যৌবন ও তারুণ্য। দ্বিতীয় পুঁজি নারীত্ব। তৃতীয় পুঁজি ইংরেজিতে যোগাযোগ সক্ষমতা। চতুর্থ পুঁজি অভিযোগহীন ২৪ ঘণ্টার কর্মব্যস্ততা। পঞ্চম পুঁজি সস্তা শ্রম। বিশ্ব বাণিজ্যমহলের প্রণোদনায় ‘উদ্যোক্তা’—প্রকৃতপক্ষে ফড়িয়া মধ্যস্বত্ব–ব্যবস্থা—এতটাই অর্থনীতি অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে যে সারা বিশ্বেই উন্নয়শীল দেশগুলোতে ‘টেলিমার্কেটিং’–এ যুক্ত হয়েছেন অগণিত জীবিকাপ্রত্যাশী মানুষ। সংক্ষেপে বলা চলে, প্রিকারিয়ান জীবিকা হলেও এই ব্যবসায় সুললিত কণ্ঠের অধিকারী সুশ্রী তরুণীদের প্রয়োজন। আরও দরকার তাঁদের, যাঁরা দিবারাত্র ২৪ ঘণ্টা চলমান কাজের যেকোনো শিফটে কাজ করতে আগ্রহী। তারা চোখে চোখ রেখে কথা বলবে না, বশে থাকবে, অন্যায্য অপেশাদার আচরণের প্রতিবাদ করবে না।

প্রিকারিয়াস উপার্জনের নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকে না। সংসার-বিশ্রাম-আনন্দ-বিনোদন, প্রিয়জনের সান্নিধ্য, সামাজিকতা, পেশাগত দক্ষতা অর্জনের সুযোগ ও সক্ষমতা প্রায় ক্ষেত্রে প্রিকারিয়েতদের জন্য কল্পনার বিষয়ে পরিণত হয়। স্বাস্থ্যহানি, যৌনস্বাস্থ্যের অবনতি, শ্রবণেন্দ্রিয়ের স্থায়ী ক্ষতি, অনিদ্রা, ক্লান্তি, স্মৃতিশক্তি হ্রাস, সংসারে ভাঙন, দৃষ্টিহানি, তরুণী বয়সেই রিপ্রোডাক্টিভ ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের (আরটিআই) কারণে প্রজননস্বাস্থ্য বিপর্যয়, অতিরিক্ত শর্করা গ্রহণ, রিপিটিটিভ স্ট্রেইন ইনজুরির (আরএসআই) কারণে নানা রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, রোগবালাই, ডায়াবেটিস, স্থূলত্ব—কী নেই সেই তালিকায়! প্রিকারিয়ান শ্রমজীবীদের নিয়মিতই বরণ করে নিতে হয় দুরারোগ্য শারীরিক–মানসিক অসুস্থতা ও ক্ষয়। ভারতে কল সেন্টারের কর্মীদের মনোদৈহিক অভিঘাত বিষয়ে তালিকার পর তালিকা হয়েছে। গবেষণারও কমতি নেই। ২০০৭ সালে সঞ্জীব হিমাচলি১২ কল সেন্টার এবং বিজনেস প্রসেসিং আউটসোর্সিংয়ের (সংক্ষেপে বিপিও) ব্যবস্থাপকদের জন্য Human Issues In Call Centers And BPO Industry শিরোনামে যে প্রতিবেদন প্রস্তুত করেন, তাতে একমাত্র পরামর্শ ছিল শ্রমজীবীদের মনোদৈহিক রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রতিটি কর্মস্থলে পূর্ণাঙ্গ মনঃসেবাকেন্দ্র স্থাপন করা। প্রিকারিয়ান কর্মস্থলে এসব পরামর্শ খুব কমই মানা হয়। বিশ্ববাজারের ক্রেতাদের চাপে বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাতের কোথাও কোথাও কিছু সেবাকেন্দ্র চালু হলেও বেশির ভাগ কারখানাই সেই পুরোনো অস্বাস্থ্যকর পদ্ধতিতেই চলছে।

চার. ‘নগদ যা পাও, হাত পেতে নাও’ ধরনের দর্শন : বিশ্বায়ন বা মুক্তবাজার অর্থনীতি ক্ষমতাবানদের জন্য উন্মুক্ত বাজার সৃষ্টি করলেও সামাজিক ন্যয্যতানির্ভর শ্রম ব্যবস্থাপনাকে এড়িয়ে চলে। ‘নগদ যা পাও, হাত পেতে নাও’, ‘বাকির খাতা শূন্য থাক’; এ জাতীয় দর্শন প্রিকারিয়েতদের কাঁচা অর্থ উপার্জনের চিন্তায় মাতিয়ে রাখে। যেমন, দারাজের একজন ডেলিভারি বয়ের কথা বলা যায়। তাঁকে হয়তো পাঁচ-সাতটা ভিন্ন চাকরির চিন্তা মাথায় রাখতে হয়। তিনি জানেন না কাল কী হবে। আজ চাকরি আছে, আগামীকালই বলা হতে পারে, তোমার চাকরিটি আর নেই। তিনি তখন হয়তো কোনো একটা চায়নিজ হোটেলে ওয়েটারের চাকরি নেবেন। এ রকম চায়নিজ রেস্টুরেন্টে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। জিজ্ঞেস করেছিলাম, কত বেতন পান? তাঁরা জানালেন যে ধরাবাঁধা কোনো বেতন নেই। প্রশ্ন করেছিলাম, তাহলে কাজ করেন কেন? তাঁদের উত্তর ছিল, বকশিশের জন্য। অর্থাৎ তাঁদের জীবিকার উপায় এতটাই সংকীর্ণ যে তাৎক্ষণিক ছিটেফোঁটা আয়ই তাঁদের প্রত্যাশা ও ভরসা। বখশিশনির্ভরতা টেকসই উপার্জনপদ্ধতি নয়। বেতনভুক্তই যে হতে হবে, এমনটাও নয়। কেউ ব্যবসায়ী হবেন, কেউবা উদ্যোক্তা। তবে পেশা যা–ই হোক না কেন, ভবিষ্যৎ জীবনধারণের নিশ্চয়তাটি প্রয়োজন। একজন ছোট সরকারি কর্মচারীও মাতৃত্বকালীন ছুটি, অসুস্থতার ছুটি ও ভাতাগুলো পাওয়ার অধিকার রাখেন। অবসর–সুবিধা, গ্রাচ্যুইটি, ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা ইত্যাদি অধিকার থাকার কারণে তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কমবেশি সুযোগ থাকে। তাঁর পারিবারিক খরচের বাজেট সুসংবদ্ধ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু অনিশ্চয়তার কারণে প্রিকারিয়াতের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার সুযোগ থাকে না বললেই চলে।

প্রিকারিয়াতাইজেশনে বিশ্বায়নের দায়

প্রিকারিয়াতাইজেশনের পেছনে বিশ্বায়ন কতটা দায়ী? আশি-নব্বইয়ের দশকে বিশ্বায়নকে দায়ী করা হচ্ছিল না। সে সময় অ্যাডাম স্মিথের নব্য অনুরাগীরা নানাভাবে প্রমাণ করে দেখিয়েছিলেন যে বাজারব্যবস্থার ‘অদৃশ্য হাত’ যেকোনো অসাম্যকে জবরদস্তি বা অযাচিত হস্তক্ষেপ ছাড়াই সমতার পথে নিয়ে যাবে এবং বাজার নিজস্ব পদ্ধতিতেই ত্রুটিবিচ্যুতি শুধরে নেবে। কার্ল পপারের দর্শনালোকে মিল্টন ফ্রিডম্যান বা কৌশিক বসুরা বিশ্ব অর্থনীতির ভবিষ্যৎ বিকাশধারাকেও ধ্রুপদি অর্থশাস্ত্রের আলোকে বিশ্লেষণ করেছিলেন বলেই সম্ভবত এই বিপত্তি।১৩ ‘আউটসোর্সিং’ বা অন্যদের দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়ার পুঁজিবাদ যে মহাশক্তিধর মুনাফা বর্ধনযন্ত্রের রূপ নেবে, তাঁরা হয়তো তেমনটি ভাবেননি। নইলে ‘প্রথম দিকে যদি প্রবৃদ্ধি বাড়ে, বিভিন্ন বর্গে বৈষম্য বাড়লেও বাজার তার নিজস্ব ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি দিয়ে সেটিকে সমন্বয় করে নেবে এবং ভারসাম্য ফিরিয়ে আনবে’ জাতীয় বিশ্লেষণটি বেঠিক প্রমাণিত হতো না। বাস্তবে রাষ্ট্রগুলোর প্রবৃদ্ধি বেড়েছে কিন্তু আয়বৈষম্য ও বণ্টনবৈষম্য কমেনি। মেক্সিকোর ম্যাকিলাদোরা অ্যাসেম্বলি লাইন সোয়েটশপগুলোসহ বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাত—কোনোটিই প্রকৃত অর্থে শিল্প নয়। পশ্চাৎ সংযোগ বা অগ্র–সংযোগবিহীন (ব্যাকওয়ার্ড অ্যান্ড ফরোয়ার্ড লিংকেজ) সাব-কন্ট্রাক্ট বা ‘পুটিং আউট’ ব্যবস্থা হওয়ায় উন্নয়নশীল বিশ্বে প্রচলিত ‘শ্রমিক’–এর চেয়ে প্রিকারিয়াতের সংখ্যা বহুগুণে বাড়ছে১৪

নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ টমাস পিকেটি তাঁর একবিংশ শতাব্দীতে পুঁজিবাদ বইয়ে১৫ দেখালেন যে বৈষম্য আগের তুলনায় অনেকাংশে বেড়েছে। ১ শতাংশ মানুষের সম্পদ জ্যামিতিক হারে বাড়ছে আর ৯৯ শতাংশ মানুষ সম্পদ হারাচ্ছেন। তিনি বলেছেন, বাজারের ওপর সবকিছু ছেড়ে দেওয়া যাবে না, সেখানে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ দরকার। পিকেটি এমনটাও দেখালেন, যে ১ শতাংশের কাছে সম্পদ যাচ্ছে, তাঁদের ১ শতাংশ আবার অকল্পনীয় হারে সম্পদ পুঞ্জীভূত করছেন। জাতীয় অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি এবং বহুজাতিক পুঁজির বিনিয়োগ ও মুনাফার সঞ্চয়নে উল্লম্ফনে তারতম্য স্পষ্ট। রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে অর্থনৈতিক সমন্বয়ব্যবস্থা থাকলে অসাম্য কমিয়ে আনা যেত। কিন্তু মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সাম্য ও সমতাবিধানের পদ্ধতিও নির্ধারণ করা হয়েছে বিশ্বায়িত বাণিজ্য-সম্পর্কের ভিত্তিতে। টমাস পিকেটির মতে, অর্থনীতির জোয়াল সম্পূর্ণরূপে বাজারের হাতে সঁপে দিয়ে রাষ্ট্রের দায়মুক্ত থাকার বিষয়টি আকষ্মিকভাবে হয়ে যায়নি। এমনটিও নয় যে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের বা মুক্তবাজারের রাশ টেনে সংশোধনের পথে যাওয়ার আর কোনো সুযোগও নেই। এটা সুপরিকল্পিত এবং এটা আসলে পুঁজিবাদেরই বৈশিষ্ট্য।

ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নৃবিজ্ঞানী অর্জুন আপ্পাদুরাই যে পাঁচ ধরনের বিশ্বায়নের পটভূমি (scapes) বর্ণনা করেছেন, তার আলোকে বিশ্বায়নের দায় বোঝার চেষ্টা করা যেতে পারে। প্রথমত, আমরা বিশ্বায়ন বলতে কী বুঝছি, বিশ্বায়নের যুগসন্ধিক্ষণে কী কী ঘটনা ঘটছে? এক, ‘এথনোস্কেপ’ একটি বৈশিষ্ট্য, যা মানুষের ব্যাপক হারে স্থানান্তর এবং নানা দেশের নানা মতের ও ভাষার গণমাধ্যমের নজরে এনেছে। ফলে মানবসমাজ জাতিগত পরিচয়ের গণ্ডির ওপরে উঠে বৈশ্বিক বলয়ের অংশে পরিণত হচ্ছে। পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে পর্যটক, অভিবাসী, শরণার্থী, নির্বাসিত ব্যক্তি কিংবা অতিথি শ্রমিকদের স্থানান্তর অনেক বেড়েছে। তাঁরা যেকোনো দেশে যেতে পারছেন। দুই, ‘টেকনোস্কেপ’। বিশ্বনাগরিক যান্ত্রিক বা তথ্যগত প্রযুক্তির অবাধ প্রবাহের সমরূপ ভোক্তায় পরিণত হচ্ছে। যেমন স্মার্টফোনে ধনী দেশ, গরিব দেশ—সব দেশের মানুষের জন্য একই সুযোগ তৈরি হয়েছে। ‘ব্র্যান্ড ফেটিশিজম’ বাড়ছে। নামীদামি ব্র্যান্ডের জামা-জুতা-ঘড়ি-ফোন-টিভি-ফ্রিজসহ সব ভোগ্যপণ্য সবার জন্য ব্যবহারযোগ্য হয়ে উঠছে। তিন, ‘আইডিওস্কেপ’। চিন্তা বা ভাবাদর্শের অবাধ প্রবাহে ভাবনার ভিন্নতা ঘুচছে। আদর্শগত বা চিন্তাচেতনার জগতে সমরূপতা বাড়ছে। ভাবধারার বিশ্বায়ন ঘটছে। যেমন ‘সন্ত্রাসবাদ’ শব্দটি বিশ্বনাগরিকদের মধ্যে একই রকম অর্থ ও ভাব তৈরি করছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, বিশ্বায়নের ক্ষতি কী? ক্ষতি এই যে ভোগের ক্ষেত্রে হোমোজেনেটি বা সমরূপিতা তৈরি হলেও উৎপাদন এবং আয় ও সম্পদ বণ্টনে সমরূপিতা নয়, অসমরূপিতাই বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রিকারিয়েতদের একক কোনো শ্রেণিতে পরিণত হওয়ার সুযোগই নেই। ভোক্তা হিসেবে প্রিকারিয়েতও গ্লোবাল বা বৈশ্বিক পর্যায়ের ভোক্তা। কিন্তু আয়-উপার্জন ও সর্বহারা বৈশিষ্ট্যে তারা একান্তই লোকাল বা স্থানীয়। আপ্পাদুরাই বৈশ্বিকতা ও স্থানীয়তার এই অসম মিশেলের নাম দিয়েছেন ‘গ্লোকালাইজেশন’। প্রিকারিয়েত গ্লোবালাইজেশনের অংশ হওয়ার বদলে গ্লোকালাইজেশনের পাঁকে আটকা পড়ে যাচ্ছে। ‘ম্যাকডোনাল্ড’ ফাস্ট ফুড চেইন পৃথিবীর অন্যতম বড় প্রিকারিয়েত তৈরির কারখানা, যেখানে স্থায়ী চাকরি বলে কিছু নেই। বার্গার কিং, কেএফসি হালাল খাবার চালু করেছে। স্থানীয় ও বৈশ্বিক বাস্তবতার সাংস্কৃতিক মিশ্রণ ঘটছে। কিন্তু অর্থ ব্যবস্থাপনার নৈতিকতায় সমন্বয় ঘটছে না।

প্রিক্যারিয়েত চাকুরেরা ঘণ্টাভিত্তিক মজুরি পান। তাঁদের চাকরি স্থায়ী নয়। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সেবামূলক কর্মক্ষেত্রেও স্থায়ী চাকুরের বদলে অস্থায়ী ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্তদের সংখ্যা বাড়ছে। পশ্চিমা বলয়েও উচ্চশিক্ষিতরা চাকরি হারাচ্ছেন। অনেকেই একাধিক উপার্জনমুখী কাজে যুক্ত হতে বাধ্য হচ্ছেন। ঢাকায় একদল চাকরিজীবী অফিস শেষে পাঠাও মোটরসাইকেল চালিয়ে খানিকটা অতিরিক্ত উপার্জনে নামেন। আর্থিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার যজ্ঞে বিসর্জন দেন বিশ্রাম, সন্তানসন্ততি ও প্রিয়জনের জন্য বরাদ্দ করা সময়। পশ্চিমেও একদল একদিন ট্যাক্সিক্যাব চালাচ্ছেন, পরদিন উবার চালাচ্ছেন। এই অবস্থা সৃষ্টির পেছনে বিশ্বায়নের দায় রয়েছে। বিশ্বায়ন ভোক্তামানস তৈরি করে দিলেও ভোগবাদী জীবনযাপনের সামর্থ্য তৈরি করেনি। উল্টো সেই সম্ভাবনাকে সুদূরপরাহত করেছে। ‘অন কল’ কাজ বাড়ছে। সারা বিশ্বেই ‘অন কল’ কর্মী/ প্রিকারিয়তদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। গাই স্ট্যান্ডিং এ জন্য তাঁদের বলেছেন ‘নিউ ডেঞ্জারাস ক্লাস’। তাঁদের সামাজিক প্রতিক্রিয়া পশ্চাৎবাদী, ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’ ধরনের ভাবালুতা এবং বর্তমান জীবনযাত্রার প্রতি অসন্তোষ-অতৃপ্তি নিয়েই তাঁদের দিন কাটে। সময়–সময় তারা ফেটে পড়ে বিদ্রোহে।

গাই স্ট্যান্ডিং বিবেচনায় আনলেন অভিবাসী, সংখ্যালঘু, স্থানচ্যুত, বাস্তুচ্যুত এবং ভাসমান মানুষদেরও। যেমন, আমরা রোহিঙ্গাদের বাস্তবতা বিবেচনায় নিতে পারি। রোহিঙ্গারা যে কাজই পাবে, বাছবিচার ছাড়াই তাতে লেগে যাবে। উপায়হীনতা প্রিকারিয়াতাইজেশনের অন্যতম বড় কারণ। গাই স্ট্যান্ডিং দেখিয়েছেন, উপায়হীনতা তাদের ‘অ্যাটাভিস্ট’ (পশ্চাৎপন্থী) ও ‘রোমা’ (ভ্রাম্যমাণ) দলভুক্ত হতে বাধ্য করে। পশ্চাৎপন্থী, রক্ষণশীল ও প্রতিক্রিয়াশীল প্রিকারিয়েত আশ্রয় খোঁজে প্রতিক্রিয়াশীল নেতৃত্বের পেছনে। এভাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প বা দুতার্তের মতো জনতুষ্টিবাদী নেতার উত্থান ঘটে। গাই স্ট্যান্ডিং দেখালেন, একদল প্রিকারিয়েত যেমন অ্যাটাভিস্ট ও রোমা ধরনের রক্ষণশীলতার ছায়াতলে আশ্রয় নেয়, তৃতীয় একটি শিক্ষিত দল বিপরীত পথ বেছে নেয়। যেমন বার্নি স্যান্ডার্স বা জেরেমি করবিন ধরনের প্রগতিশীল নেতৃত্বের মধ্যে তাঁরা আশা খোঁজার চেষ্টা করেন। তাঁরা বিক্ষোভ-বিদ্রোহের মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্নও দেখে থাকেন। ভবিষ্যতে এই দুই দলের মধ্যে একধরনের সংঘাতের সম্ভাবনা টের পাওয়া যায়। তবে সময়ই বলে দেবে, প্রিকারিয়েতরা কখনো রাজনৈতিক চেতনাসম্পন্ন ‘শ্রেণি’ হয়ে উঠবে কি না!

হেলাল মহিউদ্দীন: অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়

পাঠনির্দেশ

Zinn, Howard 2015. A People’s Hostory of the United States. US: Harper Perennial Modern Classics; Reissue edition

BBC. 2011. Are call centres the factories of the 21st Century? http://www.bbc.co.uk/news/magazine-12691704 (retrieved 17 March 2022);

Cowie, Claire. 2007. The accents of outsourcing: The meanings of ‘neutral’ in the Indian call centre industry. World Englishes 26(3).316–30.

Forey, Gail, and Jane Lockwood (eds.) 2010. Globalisation, communication and the workplace. London: Continuum.

Friginal, Eric. 2008. The language of outsourced call centres: A corpus-based study of cross-cultural interaction., Flagstaff, AZ: Northern Arizona University PhD thesis;

Standing, Guy. 2014. The Precariat. [Excerpt of the book with same title] Contexts 13: 10. American Sociological Association. Also available at http://ctx.sagepub.com/content/13/4/10]

Standing, Guy. 2011. The Precariat–The New Dangerous Class. Policy Network.

David Graeber 2018. Bullshit Jobs: A Theory. UK: Simon & Schuster.

Fox O'Mahony, Lorna, David O'Mahony and Robin Hickey (eds), Moral Rhetoric and the Criminalisation of Squatting: Vulnerable Demons? (London: Routledge, 2014).

Krugman, Paul 2011. "We Are the 99.9%". The New York Times (November 24).

Stiglitz, Joseph 2011. "Of the 1%, by the 1%, for the 1%". Vanity Fair. (May)

তথ্যসূত্র

১. [Gottheil, Fred M. 1962. “Increasing Misery of the Proletariat: An Analysis of Marx's Wage and Employment Theory”. The Canadian Journal of Economics and Political Science. Canadian Economics Association. pp. 103-113.]

২. [Standing, Guy. 2014. The Precariat. [Excerpt of the book with same title] Contexts 13: 10]

৩. [দেখুন https://dw.com/bn/আমাদের-কোনো-উপায়-নেই/a-58155722]

৪. [দেখুন Singh, Sushant and Aanchal M. 2020. “Indian migrants, across India”. Indian Express, April 29, এবং Chishti, Seema 2020. “How many migrant workers displaced? A range of estimates”. Indian Express, June 8.]

৫. [দেখুন Golubev, Sergei 2021. https://pulse/precariat-new-threat-human-capital-sergey-golubev]

৬. [দেখুন Andreff. Wladimir 2009. Outsourcing in the new strategy of multinational companies: foreigninvestment, international subcontracting and production relocation. Papeles de Europa 18, pp. 5-34]

৭. [দেখুন 1) McIvor, R 2000. A practical framework for understanding the outsource process. Supply chain management 5: 22-36; 2) Bahrami, B. 2009. A look at outsourcing offshore. Competiveness Review: An international buisness journal incorporating journal of global competiveness 19: 212-223; 3) Jones, WO 2009. Outsourcing in China: Opportunities, challenges and lessons learned. Industry insight. Strategic Outsourcing: An International Journal 2: 187-203.]

৮. [দেখুন Ringshaw, Grant. 2003. Call centres take the passage to India. Sunday Telegraph, May 25, 8; 2; 2) Taylor, Phil, and Peter Bain. 2005. ‘India calling to the far away towns’: The call centre labour process and globalization. Work, Employment and Society 19(2).261–82.]।

৯. [দেখুন 1) Piore, M. 1997. The economics of the sweatshop. In A. Ross (ed.) No Sweat: Fashion, Free Trade, and the Rights of Garment Workers. New York: Verso; 2) Robbins, R. H. 1999. Global Problems and the Culture of Capitalism. Boston: Allyn & Bacon; 3) Ross, A. 1997 (ed.) No Sweat: Fashion, Free Trade, and the Rights of Garment Workers. New York: Verso; 4) Seabrook, J. 1996. In the Cities of the South: Scenes from a Developing World. London and New York: Verso.]

১০. দেখুন 1) Bolton, Kingsley. 2010. ‘Thank you for calling’: Asian Englishes and ‘native-like’ performance in Andy Kirkpatrick eds “Asian call centres”. The Routledge handbook of world Englishes, ed. by, 550–64. London: Routledge; 2) Lockwood, Jane, Gail Forey, and Helen Price. 2008. English in the Philippine call centers and BPO operations: Issues, opportunities and research. Philippine English: Linguistic and literary perspectives, ed. by M. Lourdes S. Bautista and Kingsley Bolton, 219–41. Hong Kong: Hong Kong University Press.]

১১. (দেখুন https://www.zippia.com/telemarketer-jobs/demographics/)।

১২. (Himachali, Sanjeev 2007, https://www.citehr.com)

১৩. [Strauss, Bob. 2021. "How the "Invisible Hand" of the Market Does, and Does Not, Work." ThoughtCo, Sep. 3. thoughtco.com/invisible-hand-definition-4147674.].

১৪. [Standing, Guy 2017.The Corruption of Capitalism: Why Rentiers Thrive and Work Does Not Pay, London: Biteback].

১৫. [Piketti, Thomas 2017. Capitalism in the Twenty-First Century. US: Belknap Press, an imprint of Harvard University Press edition]